প্রকাশিত : ৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:১০

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত শতাধিক

রংপুর জেলা ও মহানগরসহ বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর মহানগরঃ
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত শতাধিক
রংপুর শহরের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারন জনতা। ৪ আগস্ট, ২০২৪; ছবি: নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর মহানগর অফিস।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রংপুর বিভাগীয় শহর। রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ ৫ জন নিহত ও সাংবাদিক সহ আহত হয়েছে শতাধিক। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রংপুর মহানগরীতে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরসহ বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে ।  
কাউন্সিলর মৃত্যুর বিষয়টি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহবুবার রহমান মঞ্জু নিশ্চিত করেছেন। এ সময় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি হারাধান রায় হারা ও তার সহযোগী শ্যামল (৪০) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যুবলীগ নেতা খাইরুজ্জামান খশরু ও মাসুমের লাশ পড়ে আছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্দার আব্দুল জলিল ও মিজানুর রহমান মিজান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল  ১০ টার দিকে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ সকল আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন নগরীর টাউন হলের সামনে ও সিটি কর্পোরেশনের সামনের রাস্তায়। 
বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করর্পোরেশনের দিকে চলে যায়। পরে টাউন হল কেন্দি্রক অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া করলে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে একজন নিহতসহ গুরুতর আহত হন অর্ধশতাধিত ।
এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান করা এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমান, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার ফকরুল শাহীন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার রেজাউল ইসলাম মানিক, একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান আলী হায়দার রনিসহ অন্তর্ত ১০ জন গণমাধ্যম কর্মী মারধরের শিকার হন।
অন্যদিকে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রংপুর—২ (বদরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন. মিঠাপুকুরের সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের বাড়ি ও অফিস ভাংচুর,  পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন , মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ও ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, থানা গেইট. আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দফতরে ভাঙচুর করে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।
রংপুর—২ (বদরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্যের বাসভবন ছাড়াও বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পলিন চৌধুরী ও সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহার বাসভবনে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এক দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বদরগঞ্জ পৌর শহরের জিতেন দত্ত মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা—কর্মীরা পাল্টা হামলা চালায়।
এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করে। ছাত্রলীগ নেতা—কর্মীরা আত্মরক্ষায় এমপির বাসভবনে গিয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে সংসদ সদস্যের বাসভবন। পরে তারা এমপির বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে অন্তত ২০টি মোটরসাইকেলসহ তার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ চালায়।

উপরে