প্রকাশিত : ৭ আগস্ট, ২০২৪ ২২:৫১

রংপুর অঞ্চলের রোপা আমন ধান রোপনে ব্যস্ত কৃষক

স্বপন মিয়া, রংপুরঃ
রংপুর অঞ্চলের রোপা আমন ধান রোপনে ব্যস্ত কৃষক

রংপুর অঞ্চলের রোপা—আমন ধান চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে কৃষক। জমি তৈরি, চাষাবাদ আর জমিতে চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি আমন মওসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । 
মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রিয়াজ উদ্দিন জানান  রংপুরের ৮উপজেলায় চলতি বছর ১লাখ ৬৬ হাজার ৯শ ২৩ হেক্টর জমিতে রোপা—আমন ধানের চাষাবাদ করা হবে। গতকাল পর্যন্ত শতকরা ৭০ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। জেলায় ১৬ হাজার কৃষককে কৃষি প্রনোদনা দেয়া হয়েছে । 
এদিকে রংপুরের মিঠাপুকুর  উপজেলার বুজরুক হরিপুর গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের প্রান্তর জুড়ে শ্যালো মেশিনের শব্দ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে শ্যালো মেশিন। আমনের চারা রোপনের সময় গড়িয়েছে। অবশেষে শ্যালো মেশিন স্থাপন করেই আমন রোপন শুরু করেছেন কৃষকরা। আবার কেউ কেউ রোপনকৃত আমনের চারা রক্ষায় জমিতে নিয়মিত সেচ দিচ্ছেন।
রংপুর অঞ্চলে বন্যার পানি নেমে গেছে। যার কারণে উচুঁ নিচু সব শ্রেণির জমিতে নতুন রোপা আমন ধানের চারা রোপানের ধুমপড়ে গেছে। রোপা আমন ধান চাষ বৃষ্টি পানির উপর নির্ভর ফসল। প্রকৃতি এ বছর প্রাণভরে বৃষ্টি দিয়েছে। তার পরেও প্রকৃতি নির্ভর এই ধানচাষে যদি খরার সময় সেচ দেয়া যায়। তাহলে শতকরা ৬০ পার্সেন্ট বেশী ফলন হয় থাকে।
সদর এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে বৃষ্টির পানি পেয়ে জমি চাষ করেছিলাম। কিন্তু মাঝে কয়েক দিন প্রচন্ড খরতাপে চাষকৃত জমি শুকিয়ে যায়। গভীর নলকূপ থেকে সেচ পানি নিয়ে রোপন করারও উপায় নাই। আবার চারার বয়স হয়ে যাচ্ছিল, মহা চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে গত কয়েকদিন আগে  পানি পেয়ে  জমি রোপন করেছি। তিন বিঘা জমি রোপন করেছি। উপজেলা জুড়েই চলছে জমি রোপন। এজন্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে, বেড়েছে কদর। তিন বিঘা জমি রোপন করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
দিন রাত সমানতালে চলছে জমি চাষ ও রোপনের কাজ। একসঙ্গে জমি রোপনের কারনে শ্রমিক সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিঘায় প্রকার ভেদে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রোপনের খরচ। শ্রমিক মোস্তফা জানান, আমরা এক সাথে ৮/১০ জন শ্রমিক জমি রোপন করছি। এক বিঘা জমি রোপনের জন্য ১৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৪/৫ বিঘা জমি রোপন করা হচ্ছে। আবার কোন দিন ৬ বিঘাও রোপন করা যায়। 
কৃষকরা জানান, সময়মত বৃষ্টির পানি না পেলে জমি রোপন করা যেত না। কারন সেচ পানিতে রোপা আমন ধান রোপন করা অসম্ভব। আবার গভীর নলকূপ অপারেটরদের রয়েছে দৌরাত্ম্য। রহমতের বৃষ্টির পানিতে জমি চাষ করা গেলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে সার কীটনাশক। এক বিঘা জমি রোপন করতেই নিম্নে ৫ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ব্যাপক। রোপা আমন ধান রোপনে কৃষকদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারন ধান কাটা মাড়ায়ের পর আলু রোপন হবে। এজন্য কে কার আগে রোপন করতে পারে। আগে রোপন করতে পারলে আগে কাটা পড়বে। আর হয়তো ১০/১২ দিনের মধ্যে জমি রোপন শেষের দিকে চলে আসবে। 
রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান চলতি আমন মওসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ২০ হাজার ৭৫  হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬লাখ ১২ হাজার ৬শ ৭৫ হেক্টর জমিতে  রোপা আমন চাষ করা হয়েছে । যাহা শতকরা হিসেবে ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।