রক্ত কেনাবেচা চক্রের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে নওগাঁয় হামলার শিকার দুই সাংবাদিক

নওগাঁয় রক্ত কেনাবেচা চক্রের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এনামুল হক এর নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন, বণিক বার্তা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি আরমান হোসেন রুমন এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ ২৪ ডটকমের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীম। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট পায়ে ইনফেকশন জনিত সমস্যায় বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন জেলার পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের কান্তাকিসমত গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী সুষমা মন্ডল। এরপর সেখানে অপারেশন করানোর নামে রোগীর স্বজনদের তড়িঘড়ি করে দুই ব্যাগ এবি নেগেটিভ রক্ত ব্যবস্থ্যা করতে বলে ক্লিনিক কতৃর্পক্ষ। এক পর্যায়ে উপায় রোগীর স্বজনদের মানসিক চাপে ফেলে রক্ত সংগ্রহের নামে ৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে জড়িত ছিলেন ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল হক ও তার ফার্মেসী বিভাগের ইনচার্জ অরূপ কুমার। সম্প্রতি ওই ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে রোগীদের ফাঁদে ফেলে এভাবে রক্ত কেনাবেচার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য—প্রমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উপস্থাপন করেন ভুক্তভোগী সুষমা মন্ডলের নাতি অপূর্ব কুমার। শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে শহরের বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক আরমান হোসেন রুমন ও মনিরুল ইসলাম শামীমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রক্ত কেনাবেচা চক্রে জড়িত বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক। এক পর্যায়ে পেটুয়া বাহিনীকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় দুই সাংবাদিকের উপর হামলা চালান তিনি। এরপর টানা ২০ মিনিটেরও বেশি সময় একটি কক্ষে দুই সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখেন এনামুল হক। পরে সংবাদ প্রকাশ করা হলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেন তিনি।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের উপদেষ্টা সাঈদ জোবায়েদ অনিক। তিনি বলেন, বলাকা ক্লিনিকে ওই দুই সাংবাদিক প্রবেশের পর ফার্মেসী বিভাগের ইনচার্জের কাছে রক্ত কেনাবেচার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরিচালককে ডেকে নেন। পরিচালক এনামুল হক সেখানে আসা মাত্রই সাংবাদিকদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেয় একদল সন্ত্রাসী বাহিনী। সকলে মিলে দুই সাংবাদিককে টেনে পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে দুই সাংবাদিককে আটকে রেখে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ মেরে ফেলার হুমকি দেন পরিচালক এনামুল হক। এক পর্যায়ে দুই সাংবাদিককে টানা ২০ মিনিট পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
হামলার শিকার সাংবাদিক আরমান হোসেন রুমন বলেন, বলাকা ক্লিনিকে প্রায়ই ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব কারণে বেশ কয়েকবার ক্লিনিকটি বন্ধ করে দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ক্ষমতাবলে এনামুল হক সেটি আবারো চালু করেন। রোগীদের জিম্মি করে রক্ত কেনাবেচায় নওগাঁ শহরে একটি চক্র কাজ করে। এ চক্রের সন্ধ্যানে বেরোলে চাঞ্চল্যকার তথ্য আসে এনামুল হক এর বিরুদ্ধে। সেই বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, মাইক্রোফোনসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্ট কেড়ে নিয়ে হামলা চালায় এনামুল। পরে সেখানকার একটি কক্ষে অবরুদ্ধ থাকার পর কৌশলে দুজন মুক্ত হতে পেরেছি।
সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম শামীম বলেন, অবরুদ্ধ অবস্থ্যায় এনামুল ও তার পেটুয়া বাহিনী মোবাইল দিয়ে আমাদের ভিডিও ধারন করেছে। এই সংবাদ প্রকাশ করলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। বিষয়টি সেনাবাহিনীসহ থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও আমাদের খেঁাজখবর রাখছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক বলেন, ক্লিনিকে দুইজন এসে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রক্ত কেনাবেচার বিষয়ে নানান প্রশ্ন করছিলো। তখন তাদের থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে অফিস কক্ষে বসিয়েছিলাম। এরপর দুইজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি। হামলা বা অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগটি সঠিক নয়।
ইউনাইটেড প্রেস ক্লাব নওগাঁর সভাপতি সাব্বির আহমেদ বলেন, বলাকা ক্লিনিকের অব্যস্থ্যাপনায় রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা জেলাজুড়েই আলোচিত। এই ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল হক একটি ক্যাডার বাহিনী সব সময় প্রস্তুত রাখেন। বিগত দিনেও সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছেন তিনি। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে। অবিলম্বে এ হামলায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, বলাকা ক্লিনিকে হামলার শিকার দুই সাংবাদিকের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।