প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট, ২০২৪ ২২:৩৭

পটুয়াখালি কলাপাড়ায় টানা বৃষ্টিতে ৮ কোটি টাকার সবজি নষ্ট, সবজির সংকট থাকায় দাম বাড়ছে

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট , কলাপাড়া, পটুয়াখালীঃ
পটুয়াখালি কলাপাড়ায় টানা বৃষ্টিতে ৮ কোটি টাকার সবজি নষ্ট, সবজির সংকট থাকায় দাম বাড়ছে
পটুয়াখালির কলাপাড়া নষ্ট হওয়া সবজির খেত। ছবি: এ এম মিজানুর রহমান বুলেট
লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল কলাপাড়ায় বিগত ২০ দিন ধরে চলা অতি ভারী বর্ষণে প্রায় ৮ কোটি টাকার শরৎকালীন শাক  সবজি নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। এতেএ এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমানে সবজির উৎপাদন না থাকায় দেখা দিয়েছে সবজির সংকট । হু হু করে  দাম বাড়ছে প্রতিটি সবজির। ফলে ক্রেতাদের ক্রয়ের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে।
 
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়  গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বিগত দিনে টানা বৃষ্টিতে গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছ নষ্ট হয়েছে।  লাল হয়ে গেছে গাছ। পচন ধরা শুরু করেছে গাছে। পাশাপাশি গাছে ধরা যে সবজি ছিল তাও পঁচে যাচ্ছে । ফলে হতাশায় ভুগছে এখানকার হাজার হাজার সবজি চাষিরা।
 
জানা গেছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছিল।  মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় থাকার ফলে  ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ  ছিল টানা। পুকুর খাল বিল তলিয়ে যাওয়ার ফলে এমন ক্ষতির মূখে এখানকার কৃষকেরা।
 
কৃষকরা জানিয়েছেন টানা বৃষ্টিতে তাদের করলা,মরিচ,চিচিঙ্গা,লাউসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি নষ্ট হয়েছে। করলার বাম্পার ফলন ছিল এবং দামও ভালো পেয়েছে। টানা বৃষ্টি না থাকলে এবার সবাই লাভের মুখ দেখত। আগাম শীতকালীন সবজির জন্য রোপা সকল বিজ নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, একদিকে যেমন সবজি নষ্ট হয়েছে আরেকদিকে তাদের আগাম শীতকালীন সবজির বীজ নষ্ট হয়েছে।  এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। কৃষকদের দাবী তারা যেন সরকারি সহায়তা পায়। সহায়তা পেলে আবার ঘুরে দাড়াতে পারবে ক্ষতি পুষিয়ে।
 
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষক মো. মাসুম  বলেন, এবার সবজির উৎপাদন ভালোই ছিল কিন্তু টানা বৃষ্টিতে আমার সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকার সবজি নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজির বীজও নষ্ট হয়েছে।  এখন নতুন করে বীজ বপন করার চেষ্টা করছি।
 
একই এলাকার বাসিন্দা মো. মনির হাওলাদার বলেন,এবারের সবজির উৎপাদন চোখে পড়ার মত। কিন্তু এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে সব শেষ। এখন আমাদের মূল টাকাই আসবেনা। লাভের কথাতো দূরে।
 
সবজি বিক্রেতা মো. ওমর ফারুক বলেন, সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।  সবজি না থাকায় দাম বাড়ছে।  এখন লাউ বিক্রি হয় ৭০/৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি দরে, ঢেড়শ বিক্রি হয় ৫০ টাকা কেজিতে,করলা ৭০ টাকা কেজিতে যেটি  বৃষ্টির আগে ছিল ৪০ টাকার মধ্যে।
 
আল্লাহর দান আড়ৎ মালিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কলাপাড়ার মধ্যে কুমিরমারার সবজি দিয়ে পুরো জেলা চলে। কিন্তু বিরতিহীন বৃষ্টিতে কৃষকরা ক্ষতির মূখে। সবজি না থাকায় এখন সবজির পাইকারি দাম বাড়ছে।
 
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ  মো. আরাফাত হোসাইন বলেন, এবারের টানা বৃষ্টিতে উৎপাদিত সবজির ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়েছে।  যা টাকার হিসেবে ৮ কোটি টাকারও বেশি।  ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকদের আমরা সাধ্যমত সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব। পরামর্শ সব সময় দিয়ে আসছি এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যা যা করনীয় তা করব।
উপরে