প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৯:২৭

থাকার ঘর নেই, যাত্রী ছাউনিতেই দিন পার করছেন থাকেন মা ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি মেয়ে

মো: ইমরান ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁঃ
থাকার ঘর নেই, যাত্রী ছাউনিতেই দিন পার করছেন থাকেন মা ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি মেয়ে
এক সময় ছিল সোনার সংসার। স্বামী ও এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল সুলতানা ইয়াসমিন দম্পতির। হঠাৎ অজানা রোগে সুলতানা ইয়াসমিন শারীরিক ভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। ছাড়তে হয় স্বামীর সুখের সংসার। সুলতানা ইয়াসমিন বিকলাঙ্গ হওয়ায় সৎ মা তাদের বাড়িতে জায়গা দেয়নি। এরপর থেকেই নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বাধ্য হয়ে যাত্রীছাউনিতে থাকছেন তারা। মা ও মেয়ে রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল টাকা পয়সা তুলে এখন সংসার চলে তাদের।
নওগাঁর জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালাহৈর গ্রামের সুলতানা ইয়াসমিন (৪৫) ও মেয়ে তানজিলা খাতুন (১৬) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সুলতানা ইয়াসমিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডী গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে এবং উপজেলা বালাহৈর গ্রামের তাইজুল ইসলামের স্ত্রী।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে নিয়ামতপুর সদর বাস টার্মিনালের যাত্রীছাউনিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী মা ও মেয়ের দেখা মেলা। যাত্রীছাউনিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে জামা কাপড়। এঁটো প্লেটে মাছি ভনভন করছে। দুর্গন্ধে আশপাশে দাঁড়ানোর উপায় নেই। যাত্রীছাউনী এখন তাদের বসতঘর। অসহ্য ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন মা। নেই ওষুধ কেনার টাকা। চাল না থাকায় রান্না হয়নি সকালে। ১৬ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে তানজিলা খাতুন বেরিয়েছেন ভিক্ষা করতে। দুপুরে ফিরলে তবেই খাওয়া হবে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তানজিলা খাতুন বলেন, আমাদের একটা থাকার ঘর নাই। মাকে নিয়ে খুব কষ্টে থাকি। সমাজের কোন হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের একটি ঘর দিতেন। তাহলে আমাদের আর এভাবে রোদ বৃষ্টিতে কষ্ট হত না।
প্রতিবন্ধী সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে আমারও একটা সুখের সংসার ছিল। তিন বছর আগে হঠাৎ অজানা রোগে শারীরিক ভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়লে স্বামী তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে উঠতে দেয়নি সৎ মা। কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় নিয়ামতপুর উপজেলা হাসপাতাল চত্বরে ছিলাম।এরপর সেখানেও থাকার জায়গা না পেয়ে মাস তিনেক ধরে মেয়েকে নিয়ে যাত্রীছাউনিতে থাকছি।
তিনি আরোও বলেন, মেয়েটা সারাদিন বিভিন্ন জনের কাছে গিয়ে হাত পাতে। যেটুকু চাল টাকা পয়সা পায় সেই টুকু নিয়ে এক বেলা দু-মুঠো ভাত মুখে উঠে। আমার মেয়েটাও বড় হচ্ছে। মেয়েটার জন্য একটা থাকার ঘরের প্রয়োজন। সরকারে কাছে একটা ঘরের দাবী করেন তিনি।
নিয়ামতপুর বাসটার্মিনালের চেন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, যাত্রীছাউনিতে তারা বসবাস করায়। দুর্গন্ধে আশপাশে দাঁড়ানোর উপায় নেই। বাধ্য হয়েই বাসের জন্য অন্য জায়গায় দাঁড়াচ্ছে যাত্রীরা। তাদের থাকার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাদিকুর রহমান মন্ডল বলেন, আমাকে ইউএনও মহোদয় বিষয়টি অবগত করলে আমি ঘটনা স্থানে যায়। মা ও মেয়েকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে হস্তান্তর করা হবে। সরকারি উদ্যোগে ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেলে তাঁদের অবশ্যই একটা ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) ইমতিয়াজ মোরশেদ মুঠোফোন বলেন, প্রতিবন্ধী মা ও মেয়ের বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেলে তাঁদের একটা ঘর অবশ্যই দেওয়া হবে।
উপরে