প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ০২:০২

মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ-বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ-বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকরা
বগুড়া জেলার চারদিকে মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ দেখা দিয়েছে। চারপাশ ঘেরা ধানের ক্ষেত,যে দিকেই চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে। ক্ষেত ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা পড়েছে। গ্রাম গঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নজর কাড়ছে আমন ধানের ফসল। এতে করে খেটে খাওয়া কৃষকেরা আগামীর সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে ধান ক্ষেতের মাঝে। এযেন হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজ পাতা ও সোনালী ধানের শীষ। আর কিছু দিনের মধ্যেই আমন ধান পাকা শুরু করবে। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষকের মন,চলতি পথেই থমকে দাঁড়ায় পথিক। আর কয়েক দিনের মধ্যেই সকল জমিতে সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করে উঠবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা ঘর। পাশাপাশি কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি আর হাসি।
 
সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ সূত্রে দেখা যায়,বগুড়া জেলার গাবতলী,সারিয়াকান্দি,সোনাতলা,শাজাহানপুর,ধুনট,শেরপুর,শিবগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়,গ্রাম গঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহর এই দৃশ্য চিত্র। প্রতিটি ক্ষেতে ধানের শীষ উঁকি দিচ্ছে। কৃষকরা ধনের জমি পরিচর্যা নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছে।
 
এছাড়াও আরো জানায় এই জেলায় জুলাই মাসের মধ্যবর্তী থেকে কৃষকরা জমিতে রোপা আমন ধান লাগিয়েছে। অনেকে আগাম হিসাবে এর আগেও চাষাবাদ শুরু করে থাকেন। রোপণের সময়ের উপরই ধান বা যে কোনো ফসলের বেড়ে উঠা নির্ভর করে। এজেলায় কৃষকরা ব্রি ধান-৪৯,৫১,৭৫,স্বর্ণা ও রঞ্জিত জাতের ধানের বেশি চাষ করে থাকেন। এসব জাতের ধানের ফলনও ভাল হয় বলে জানায় তিনি। এতে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বেশ লাভবান হতে পারবেন কৃষকেরা,সব মিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলনের আশা করছে বগুড়ার কৃষকরা। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি,সোনাতলা,শিবগঞ্জ,শেরপুর,নন্দীগ্রাম,আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমন ধানের ফসল হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্র অঞ্চলের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেও ৭০/৭৫ ভাগ ধান দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে। জেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলোচনা করে জানা যায়,এবার আমন ধান চাষে এখন পর্যন্ত পত্তন বাদে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে সাড়ে ৭হাজার থেকে ৮হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়েও লাভের আশায়,বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে কৃষকরা। যদিও এবারের পোকা মাকড়ের আক্রমন কম,আমন ধান গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভাল হয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয়। তবে এবার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চাষাবাদ করা জমিতে রোপণ কাল অনুযায়ী কখনও নিড়ানিও দিতে হচ্ছে। আবার প্রয়োগ করতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক। পানির অভাব দেখা দিলে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। বিগত রোপা আমনে উৎপাদিত ধানের ভাল দাম পাওয়ায় মনে অনেকটা আনন্দ নিয়েই কষ্টকর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
 
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ ফরিদুর রহমান জানায়,বগুড়া জেলায় চলতি বছর রোপা-আমন মৌসুমে ১২টি উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১লাখ ৮২হাজার ৫২০হেক্টর জমি। আর চাষাবাদ হয়েছে ১লাখ ৮৪হাজার ৪৯০হেক্টর জমিতে। জেলায় চলতি মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫লাখ ৯৮হাজার ৩১৪মেট্রিক টন। জেলার কিছু কিছু এলাকায় আগাম লাগানো ধান গাছে এরই মধ্যে পাকও ধরেছে। কিছু কৃষক মোট চাষাবাদের প্রায় ১০হেক্টর জমির নতুন ধান ঘরেও উঠিয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় যমুনা নদীর তীরবর্তী বগুড়া জেলার সোনাতলা,সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় গেল বছর অল্প পরিমাণ জমির ক্ষয়-ক্ষতি হলেও এবার তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয় নাই। বগুড়া জেলায় চলতি বছর ধানের মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা তিনি।
উপরে