প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:২৩

কলাপাড়ায় বিদ্যালয়ের টেবিল চেয়ার বেঞ্চ ফাঁকা, শিক্ষার নামে চলছে তামাশা

এ এম, মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া, পটুয়াখালীঃ
কলাপাড়ায় বিদ্যালয়ের টেবিল চেয়ার  বেঞ্চ ফাঁকা, শিক্ষার নামে চলছে তামাশা
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৯ নং ধুলাসার ইউনিয়নের ১২৮ নং চর ধূলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়  ৩ জন ছাত্র - ছাত্রী নিয়ে একটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান,বিদ্যালয়ের বাকি কক্ষগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। সরেজমিনে গিয়ে জানাযায় গত কয়েক বছর ধরে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এভাবে চলে আসছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম।
 
স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের অশোভন আচরণ, অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি। ম্যানেজিং কমিটি কাগজ-কলমেইবসীমাবদ্ধ, মনগড়া ও নিজেদের খেয়ালখুশিমত চালাচ্ছেন পাঠদান। বিদ্যালয়ের সামনে বড় করে একক প্রতিষ্ঠান লিখে, ঠিক যেন একক আধিপত্যই বিস্তার করেন। সরেজমিনেও মিলেছে এসবের সত্যতা। 
 
 সরেজমিনে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়। দশটার সময় ক্লাসে আসেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর। আকলিমা নামের এক শিক্ষিকা সেও দশটার কিছু পরে আসেন,
সাড়ে দশটার দিকে গুটি গুটি পায়ে বিদ্যালয় প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আল-আমিন বিশ্বাস। ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীশূন্য। সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিস কক্ষে ঢুকে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর একসাথে করেন সহকারী শিক্ষিক জাহাঙ্গীর ও আকলিমা। তবে হাজিরা খাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। আরেক সহকারী শিক্ষক সাওদাও রয়েছেন ছুটিতে বলে জানান তবে ছুটির কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি প্রধান শিক্ষক। সোজা কথায়, বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে  প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট উপস্থিত ছিল ১১ জন।
 
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনো ক্লাস না নেওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। শিক্ষকরা অনিয়মিত হওয়ায় কারণে বিদ্যালয়টিতে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অভিযোগ রয়েছে একই ফ্যামিলির প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন থাকায় তারা পালা বদল করে ক্লাস নিচ্ছে। বাবা আসলে মেয়ে আসেনা মা আসলে বাবা আসে না এ যেন চোর পুলিশের খেলা খেলছে শিক্ষার্থীদের সাথে। যার ফলে এখানে বাচ্চাদের দিলে তাদের লেখাপড়ার কোনো উন্নতি হয় না, তাই বাধ্য হয়ে তাদের অন্যত্রে নিয়ে যেতে হয় এমন অহরহ অভিযোগ উঠেছে। 
 
 
স্থানীয় সজীব তালুকদার সহ স্থানীয় একাধিক অভিভাবকরা বলেন। সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ও সুন্দর এবং স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারো মুখরিত হয়ে উঠুক। আমরা  এমনটাই প্রত্যাশা করি। 
 
অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসে না , নয়টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনো ১০টা কখনো ১১টায় আসেন।তারা ঠিক মতো ক্লাস নেয় না। প্রধান শিক্ষক, তার মেয়ে স্ত্রী সহ একই পরিবারের তিনজন তারা একদিন এসে দুই-তিন দিনের সই একবারে দিয়ে চলে যায়। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক। 
 
স্থানীয় লিটন হোসেন তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে আজ বিদ্যালয়টি প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছে শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ না করলে তারা তাদের বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করবেন না।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন গত এক বছর আগে তাহার ছেলেকে এ বিদ্যালয়ে এনে ভর্তি করেন। কিন্তু গত এক বছরে সে এখনো পর্যন্ত বই দেখে রিডিং পড়তে পারে না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জন। কিন্তু উপস্থিতি হয় প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন। শিক্ষার্থী কম থাকায় অবসর সময় কাটাতে হয় শিক্ষকদের।
 
সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা বেগম তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।
 
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস বলেন, আমি, আমার স্ত্রী, ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি। শারীরিক অসুস্থ থাকার কারনে গত দুই দিন স্কুলে আসেননি তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দ্বায় শিকার করেন।  
 
তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা গত বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি রবিবার এসে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই। মেয়ে সাওদা সহকারী শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে ছুটিতে আছে বলে জানান তবে ছুটির কাগজ দেখাতে পারেন নি।
 
কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি, সরেজমিন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
 
 উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
 
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: বখতিয়ার রহমান বলেন, অতিদ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। 
উপরে