রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা
কবি সুকান্ত সেন তার "স্বাধীনতার সুখ" কবিতায় বলেছেন “বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তাই? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।”বাবুই পাখির সেই দৃষ্টিনন্দন বাসা গ্রাামেগঞ্জের উঁচু তালগাছ, খেজুর গাছ এবং নারিকেল গাছে দেখাযেত। কিন্তু সময়ের বিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে তালগাছে সেই বাবুই পাখির বাসা।
সিরাজগঞ্জে গত কয়েক বছরের তুলনায় গাছে গাছে বেড়ে গেছে বাবুই পাখির বাসা। লক্ষ করা গেছে পর্যাপ্ত তাল গাছের অভাবে নারিকেল গাছে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে বাবুই পাখি। রায়গঞ্জ উপজেলার বাঁকাই, চাঁন্দের পাইকোড়া, ধলজান, তাড়াশের দেশিগ্রাম, উত্তর শ্যামপুর, এবং সলঙ্গার ধুবিল, আমশড়া সহ বেশ কটা গ্র্মে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা। আর নিত্যদিনই বাসা দেখতে ছুটে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা পেশায় যুক্ত কর্মজীবী মানুষেরা।
শুধু বাবুই পাখিই নয় প্রায় সব ধরনের পাখিই আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আর হারিয়ে যাওয়ার এই দুঃসময়ে বাবুই পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ , তাড়াশ, সলঙ্গা সহ বিভিন্ন উপজেলার তাল গাছ এবং নারিকেল গাছ গুলোতে । এই এলাকায় বেড়াতে আসা অতিথিরা এখন বাবুই পাখি আর প্রকৃতির এই সৌন্দর্য় উপভোগ করছেন।
বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক, সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সময় পেলেই আমি এবং আমার পরিবার প্রশান্তির খোঁজে প্রায়ই গ্রামে ছুটে আসি। তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ও বিচরণ খুবই আনন্দ দেয়।
অপর এক লেখক ও উপ-প্রধান বন সংরক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী কবির হায়দার জানান, বৃক্ষ নিধন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। এলাকার সচেতন ব্যাক্তিরা মনে করছেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম অনেকটাই কমে গেছে। এখন উঁচু তাল গাছের অভাবে পাখিগুলো নারিকেল গাছে বাসা বাঁধছে। পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ ও বেশি বেশি তাল গাছ রোপন করা হলে অনায়াসে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি। একই সাথে রক্ষা মিলবে বজ্রপাতে মৃত্যুর কারণ ।
গ্রামাঞ্চলে এই পাখি বাউই নামেও বেশ পরিচিত। বাবুই পাখি বেশ দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল। তবে ওদের বাসাগুলো আকৃতি খুবই সুন্দর। খড়, কচিপাতা ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে তৈরি বাবুই পাখির বাসা। যেকারণে বাবুই পাখিকে অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার বলে ডাকে। এরা দলবদ্ধ আর কলোনী করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত।
বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বাবুই দেখা যায়। এদের মধ্যে দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। বাবুই পাখির বাসা দেখতে উল্টানো কলসির মত। বাসা বানানোর জন্য এই পাখি খুবই পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ ছাড়ায়। পরে সেই আবরণ যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোলাকৃতিটি মসৃণ করে। বাসায় শুরুতে দুটি নিম্নমুখি গর্ত থাকে। ডিম পারার সময় একদিক বন্ধ করে দিয়ে জায়গা তৈরি করে। অন্য দিকটি লম্বা করে প্রস্থান ও প্রবেশ পথ তৈরি করে। বাবুই পাখি সাধারণত উঁচু তালগাছের পাতা, নারিকেল গাছ, খেজুর গাছ ও কড়ই গাছে বাসা বাঁধে। তাদের শিল্প চিন্তা খুবই নিপুণ। প্রবল ঝড়-তুফানেও বাবুই পাখির বাসার কোনও ক্ষতিসাধন করতে পারে না।
এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, পোকা, ফুলের মধু ও কচিপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী বাবুই দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে। বাবুই ছানা এক মাসেই উড়তে শিখে বলে জানা যায়।