প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৪১

নাটোরে চলতি মৌসুমে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার মেট্রিক টন

নাটোর জেলা সংবাদদাতাঃ
নাটোরে চলতি মৌসুমে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার মেট্রিক টন

চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় পুকুর ও প্রাকৃতিক উৎস খাল-বিল, নদী-নদী থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার ২০১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মোট আর্থিক মূল্য গড়ে প্রায় চার হাজার ৮১ কোটি ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এরমধ্যে পুকুরে প্রত্যাশিত  লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৯৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। খাল-বিলে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার ৬৩১ দশমিক ২ মেট্রিক টন। যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ১০৮ কোটি ৯৩ লাখ ছয় হাজার টাকা এবং নদ নদীতে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৩২ দশমিক ছয় মেট্রিক টন, যার সম্ভাব্য মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন মাছের আড়ৎসহ পুকুর থেকে প্রায় আড়াই 'শ ট্রাক রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়  যাচ্ছে। এছাড়া উৎপাদিত মাছ জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। পাশাপাশি লাভবান হচ্ছে জেলার সাতটি উপজেলার অন্তত ৪৩ হাজার ৯২৯ জন মাছ উৎপাদনকারী ও মৎসজীবিসহ সংশ্লিষ্টরা। অপর দিকে এ জেলায় মোট উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয় ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলার তালিকায় রয়েছে নাটোর জেলা। 
নাটোর জেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট পুকুরের সংখা ৩১ হাজার ৩২০টি, মৎস চাষীর সংখা ২৫ হাজার ৮৫০ জন ুবং মৎসজীবির সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯ জন। প্রতিজনের বা মাথাপিছু প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ গ্রাম হিসাবে জেলার ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯২১ জন মানুষের মাছের খাদ্য চাহিদা ৪০ হাজার ৭৩২ মেট্রিক টন। বছরে মোট চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন মাছ। যার আর্থিক মূল্য ৩৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। 
চলতি মৌসুমে জেলায় মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা পুকুরে ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। এরমধ্যে নাটোর সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৯ হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ২৩ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুরে ১৬ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ৮ হাজার চার'শ ৬৮ মেট্রিক টন, লালপুরে পাঁচ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন ও বাগাতিপাড়ায় ২ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন। গত বছর নাটোরের ৭ উপজেলায় মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ হাজার ১৮২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় আট হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ২৩ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে আট হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুরে ১৬ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, লালপুরে পাঁচ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন ও বাগাতিপাড়ায় ২ হাজার পাঁচ'শ ৭১ মেট্রিক টন। 
অপরদিকে নদ-নদী থেকে মাছ উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৩২ দশমিক ০৬ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৪৭ দশমিক দুই মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ৯১ দশমিক পাঁচ, সিংড়ায় ১২১ দশমিক পাঁচ, গুরুদাসপুরে ৪১ দশমিক আট, বড়াইগ্রামে ১৪১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন ও লালপুর উপজেলায় ৩৮৪ দশমিক সাত মেট্রিক টন। এ উৎস থেকে প্রাপ্ত মাছের মূল্য প্রায় ১০৮ কোটি ৯৩ লাখ ছয় হাজার টাকা। 
নাটোর জেলা মৎস কর্মকর্তা ডা.মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান - রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলা হচ্ছে নাটোর। এ জেলায় প্রতিবছর ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস খাল-বিল নদ-নদী থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, এ জেলার উৎপাদিত মাছ পাশবর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি হয়। ফলে বছরজুড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্তত ২৫ হাজার ৮৫০ জন মৎসচাষীসহ সংশ্লিষ্টরা। 
তিনি আরও বলেন, মাছ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ জেলার প্রতিটি উপজেলায় মৎস্যচাষীদের নিয়মিতভাবে মাছ চাষের উপর বিভিন্ন কলাকৌশল ও উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে পরামর্শ ও ধারনা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চাষিদের মাছের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে বাজার তদারকিসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস খাল, বিল, নদ-নদীতে মাছ উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত যাতে না হয়, সেজন্য অবৈধ কারেন্ট জাল, সব বাধা অপসারণে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এজন্য জেলায় মাছ চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
জেলায় উৎপাদিত মাছ জাতীয় অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধি লাভ করবে বলে এই কর্মকর্তা জানান। 
উপরে