প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ০০:৪৯

নাটোরে "শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ " রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নামের কারনে ২২ বছরেও এমপিও পায়নি

মনিরুল ইসলাম ডাবলু, নাটোরঃ
নাটোরে

এমপিওভূক্তির সকল শর্ত পূরণ করলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নামের কারনে গত ২২ বছর ধরে এমপিও বঞ্চিত নাটোরের বাগাতিপাড়া " শহীদ জিয়াউর রহমান " কলেজ। প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই য়ুগ পরেও এমপিওভূক্তি না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। দীর্ঘ সময় ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন অনেকেই। আবার সবশেষ শিক্ষক নিবন্ধনের(এনটিআরসি) মাধ্যমে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন চারজন শিক্ষক। 

কলেজে চাকরীরত শিক্ষক - কর্মচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগ " জিয়াউর রহমান " নামের কারণেই কলেজটি দীর্ঘদিনেও এমপিও হয়নি। তাই দ্রুত কলেজটি এমপিও ভূক্ত করার দাবি জানান তারা। 
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল "জিয়াউর রহমান " নামে কলেকটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই বছরেই কলেজটি পাঠদানের অনুমতি পায় এবং স্বীকৃতি পায় ২০০৫ সালে। 
প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির সব শর্ত পুরন করে কলেজ কতৃপক্ষ। সব শর্ত পুরণ করার পরও শুধু নামের কারনে এমপিও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেন বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এমপিও না হওয়া এবং নামের কারনে কলেজটি নিয়ে নানামুখী চাপের মুখে ২০২১ সালে কলেজটির নাম বদলে রাখা হয় "দয়ারামপুর কলেজ"। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত এইচ এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে কলেজটিতে ২৭ জন শিক্ষক - কর্মচারী বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। 
একদিকে শিক্ষকদের বয়স বাড়ছে, অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও না হওয়ায় সামাজিকভাবে টিকে থাকার লড়াইয়ে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষক -কর্মচারীরা। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদর থেকে দয়ারামপুর ইউনিয়নের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। সেখানে একটি সামরিক স্থাপনা (কাদিরাবাদ সেনানিবাস) থাকায় ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসামরিক শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা কম এবং ব্যয়ও তুলনামূলক বেশি। ফলে ওই এলাকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরী। তাই " শহীদ জিয়াউর রহমান " কলেজটি এমপিওভূক্ত হলে শিক্ষকরা পাঠদানে আরও মনযোগী হওয়ার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। 
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আলতাব হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি কলেজটিতে শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘ ২২ বছর বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন তিনি। বাংলাদেশের মধ্যে এটাই একমাত্র কলেজ যেখানে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র, অথচ কলেজটি এমপিওভূক্ত নয়। 
কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোর্শেদ জানান, প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই সব শর্ত পুরণ করে তারা এমপিওভূক্তির আবেদন করেছেন।  কিন্তু দীর্ঘ ২২ বছর অতিক্রম করেও কলেজটি এমপিওভূক্ত হয়নি। 
"শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ" নামের করনেই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিহিংসার কারন দাবি করে তিনি বলেন, একদিকে এমপিওভূক্ত না হওয়া, অপরদিকে রাজনৈতিক চাপে তারা ২০২১ সালে তারা কলেজের নাম পরিবর্তন করতেও বাধ্য হন। নাম পরিবর্তন করেও প্রতিহিংসার কারনে কলেজটিকে এমপিওভূক্ত করাতে পারেননি। 
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন,বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত না। তিনি অল্প কিছুদিন হলো বাগাতিপাড়া উপজেলায় যোগদান করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তিনি বিষয়টি দেখবেন। 
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক(কলেজ) মোঃ আলমাছ উদ্দিন বলেন, এমপিওভূক্ত হওয়ার অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। সেগুলো পূরণ করে আবেদন করা হলে অবশ্যই এমপিওভূক্ত হবে। এ কলেজটির কাগজপত্র দেখলে জানা যাবে, কি অবস্থায় আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান। 
উপরে