পলাশবাড়ীতে খেজুর গাছের সংকট: গাছিরা পরিবর্তন করেছে পেশা, হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একসময় শীত মৌসুম মানেই ছিল খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের ধুম। সেই রস দিয়ে পিঠা-পুলির উৎসব কিংবা গুড়-মিঠাই তৈরি করে গ্রামীণ জীবনে আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে খেজুর গাছের অভাবে এ ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
একসময় গ্রামের রাস্তার দুই পাশজুড়ে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। গ্রামের মানুষ শীতের সকালে খেজুরের কাঁচা রস পান করত কিংবা তা দিয়ে তৈরি হতো পায়েস, ভাঁপা পিঠা, মুড়ির মোয়া ও চিতই পিঠা। কিন্তু রাস্তার উন্নয়ন কাজ, গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাব এবং অবহেলার কারণে খেজুর গাছ ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
গাছিদের পেশা পরিবর্তন
খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গাছিরাও তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। আগে তারা খেজুর রস বিক্রি করে এবং রস জ্বালিয়ে গুড়-মিঠাই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন গাছের অভাবে তাদের জীবিকার পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন গাছি এখনও ঝুঁকি নিয়ে গাছে উঠে রস সংগ্রহ করেন, যা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
কৃষি দপ্তরের ভূমিকা এবং নাগরিক উদ্যোগ প্রয়োজন
খেজুর গাছের বিলুপ্তি ঠেকাতে উপজেলা কৃষি দপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি নাগরিকদেরও নিজ বাড়ির আশেপাশে খেজুর গাছ রোপণের মাধ্যমে এই ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেজুর গাছ রোপণের মাধ্যমে না শুধু ঐতিহ্য রক্ষা করা যাবে, বরং এটি পরিবেশ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। খেজুরের রস ও গুড় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
নতুন প্রজন্মের জন্য ঐতিহ্যের সংরক্ষণ প্রয়োজন
আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও সুমিষ্ট রস সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। নতুন করে খেজুর গাছ লাগানোর মাধ্যমে কেবল ঐতিহ্যকেই রক্ষা করা যাবে না, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব।
এখন সময়ের দাবি, আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই সম্পদ রক্ষায় সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করি।