গঙ্গাচড়ায় সাথি ফসল চাষাবাদ করে কৃষকের মুখে হাসি
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যে একটি নতুন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হলুদের সঙ্গে বেগুন সাথি ফসল হিসেবে চাষাবাদ করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এই সাথি ফসল চাষের মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক লাভের সম্ভাবনা নয়, বরং মাটির উর্বরতা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন কৃষকরা।
উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের চন্দের হাট এলাকার কৃষক এনামুল হক জানান, বেগুন এবং হলুদ সাথি ফসল চাষের মাধ্যমে তারা দুই ধরনের ফসলের উৎপাদন থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাষ করা হয়, ফলে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে এবং রোগ-বালাইয়ের প্রভাব কমে যায়। এছাড়াও, বেগুনের শিকড় মাটির গভীরে প্রবাহিত হয়ে মাটি আরও উর্বর করে, যা হলুদ গাছের জন্য উপকারী।
কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, "উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা এসে ১২০০-১৩০০ টাকা মণ দরে বেগুন কিনে নিচ্ছে। ৪৫ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছি এবং এর যাবতীয় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। কিছুদিন আগে বেগুনের মণ ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা বিক্রি হত, তবে বর্তমানে বাজার দর কিছুটা কমে ১২শ থেকে ১৩শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে আমি প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বেগুন বিক্রি করেছি এবং আগামী ১-২ মাসের মধ্যে আরও বেগুন বিক্রি করতে পারব। বেগুন চাষে ব্যবহৃত সার দিয়েই হলুদ চাষ করা যায়, অতিরিক্ত কোনো সার ব্যবহার করতে হয় না। ৪৫ শতক জমিতে কাঁচা হলুদের উৎপাদন হয় প্রায় ১২০-১৩০ মণ, যার মণ প্রতি মূল্য ১২শ থেকে ১৩শ টাকা। ফলে, হলুদ বিক্রি করে প্রায় ২ লক্ষ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।"
এছাড়া, এই সাথি ফসল চাষের ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাচ্ছেন। কৃষক তাজুল ইসলাম, আবুল হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "আমরা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে এই সাথি ফসল চাষ শুরু করেছি। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে উৎপাদন খরচ কমছে এবং ফলনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের আয় বাড়ছে এবং কৃষি খাতে নতুন আশা ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।"
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, "হলুদের ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে বেগুন চাষের উপকারিতা হলো, যেহেতু হলুদের ফলন পেতে প্রায় ১০ মাস সময় লাগে, তাই এর মাঝে বেগুনের চারা লাগালে ২ মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। অল্প সময়ে ফলন পাওয়ার কারণে কৃষকরা অনেক লাভবান হতে পারেন। দুইটি ফসল চাষের কারণে কৃষকরা অধিক লাভ অর্জন করতে পারেন। তাই দীর্ঘমেয়াদি ফসলের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি ফসলের সাথী চাষ করা লাভজনক। কৃষি বিভাগ থেকে সাথী ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।"
এছাড়াও, কৃষিখাতকে উন্নয়নমুখী ও লাভজনক করতে উপজেলার দুই ফসলি জমিগুলোকে তিন বা চার ফসলি করার চেষ্টা চলছে। এবছর অনেক জমিতে সাথী ফসল চাষ করেছেন উপজেলার ইউনিয়নের কৃষকরা।