আড়তেই ঘি মঙ্গা: পীরগঞ্জে বীজ আলুর জন্য কৃষকের হাহাকার
পীরগঞ্জে বীজ আলুর সংকটে কৃষকের মাঝে তীব্র হাহাকার শুরু হয়েছে। এমনিতেই খাবার আলুর বাজারমূল্য ঊর্ধ্বমুখী, আর বীজ আলুর দাম তো দ্বিগুণের বেশি। এ সংকটের কারণে জমি তৈরি করেও আলু চাষ করতে পারছেন না অনেক কৃষক। পীরগঞ্জ আলু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও এবারের পরিস্থিতি যেন ‘আড়তেই ঘি মঙ্গা’র মতো। সংকটকে পুঁজি করে বেসরকারি বীজ প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে।
আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ও সংকটের প্রভাব
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পীরগঞ্জে কৃষকরা বছরে তিনটি ফসল চাষ করে থাকেন। ইরি-বোরো ধানের আগে আলু, সরিষা ও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রবি ফসল আবাদ করেন। এ বছর পীরগঞ্জের ৩৩১টি গ্রামে ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর (৫০ হাজার ৪২২ বিঘা) জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আলু লাভজনক হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বীজ আলুর সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে কৃষকরা শঙ্কিত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, জয়পুরহাটে আলু চাষ শেষ হওয়ায় সেখান থেকে বীজ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বীজ সরবরাহে সিন্ডিকেট ও বাজার নিয়ন্ত্রণ
কৃষিকল বীজ হিমাগার, শান্তনা কোল্ড স্টোরেজ এবং তছির উদ্দিন কোল্ড স্টোরেজের কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্র্যাক, সুপ্রিম সিডস এবং ওয়ান কেয়ার কোম্পানি তাদের বীজ আলু সরাসরি ডিলারদের কাছে পাঠাচ্ছে। এতে কৃষকরা সরাসরি বীজ সংগ্রহ করতে পারছেন না। অন্যদিকে বিএডিসি বীজ সরবরাহে বিলম্ব করায় কৃষকরা আরও বিপাকে পড়েছেন।
টুকুরিয়া ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “আলুর জায়গায় বীজ আলুর সংকট ও চড়া মূল্যের কারণে মনে হচ্ছে, যেন আড়তেই ঘি মঙ্গা!”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, “১ কেজি আলু উৎপাদনে ১০-১২ টাকা খরচ হওয়ায় কৃষকরা আলু চাষে বেশি আগ্রহী। তবে অতিরিক্ত মূল্যের কারণে আমরা ভোক্তা অধিকার ও ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্যোগ নিচ্ছি।”
বীজ আলুর এই সংকট দ্রুত সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। অন্যথায় আলু চাষে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা পুরো অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।