প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০১:০০
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে তিস্তা মহাপকল্পানা বাস্তবায়নের দাবি
উপজেলা সংবাদদাতা, গঙ্গাচড়া, রংপুরঃ
রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুঃখের প্রতীক তিস্তা নদী।প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তার ভাঙনে হাজার হাজার পরিবার তাদের সহায়-সম্বল হারায় , যা তাদের জীবন-জীবিকার জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পরেছে। এই অঞ্চলর মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করেছেন তিস্তা পাড়ের অসহায় মানুষ। সেই সাথে তিস্তা নদীকে আশীর্বাদ হিসাবে ও দেখতে চাই তিস্তপারের মানুষ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তিস্তার পরিস্থিতি দিন দিন আরো বেসামাল হয়ে উঠেছে। তিস্তার প্রধান প্রবাহ (মূলপ্রবাহ) বালু ও পলি জমে সমতলের চেয়েও উঁচু হয়ে গেছে, যার ফলে নদীর প্রস্থ অনেক জায়গায় ৭- ৮ কিলোমিটার হয়ে গেছে। খরা মৌসুমীমে দুই পারের জনপদে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এবং তিস্তার শাখা নদীগুলো মরা খালে রূপান্তরিত হয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায় , তিস্তা মহাপরিকল্পনায় রয়েছে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে ব্রক্ষ্মপুত্রের সংযোগস্থল ১০৯ কিলোমিটার পর্যন্ত নদী খনন করা। নদীর দুই তীর রক্ষা বাঁধ, নদী ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন হবে সেই মাটি নদীর দুপাশে ভরাট করে ইপিজেট, সোলার পাওয়ার প্লান্ট, শিল্প অঞ্চল বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।
তিস্তা নদী পুনরুদ্ধারের জন্য ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনা পাওয়ার চায়না ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে ভারতের আপত্তির কারণে প্রকল্পটি আটকে যায়। ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বৈরথে এই প্রকল্পটি থেমে যায়, যেমন তিস্তা চুক্তির মতোই। যদিও চীনা রাষ্ট্রদূত ও ভারত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে দীর্ঘদিনেও কিছুই কাজের কাজ হয়নি।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, ২৪০ বছরের পুরনো তিস্তা নদী কোনো খনন বা পরিচর্যা ছাড়া চলে এসেছে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ নদী আইন অনুযায়ী, ভারত তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করতে পারে না, তবে ভারত শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি একতরফা নেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরও তিনটি খাল খননের পরিকল্পনা করেছে, যা রংপুর বিভাগের আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোকে জলশূন্য করবে। ২০১৬-২০১৮ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান ও পাউবো তিস্তা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সমীক্ষা শেষ করলেও ভারতের আপত্তিতে প্রকল্পটি আটকে গেছে। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে একাধিক বার গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল।অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রংপুরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাই সরকারের বিশেষ গুরুত্বের অংশ হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিস্তা পারের মানুষের প্রাণের দাবি পুরন করা হোক।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা নদীর খরা, বন্যা ও ভাঙনে তিস্তা অববাহিকা ২ কোটি মানুষ মহাদুর্যোগে পড়েছে। প্রতিবছর নদী ভাঙনে বিপুল সরকারি-বেসরকারি সম্পদ, ফসলি জমি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্যের পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। তিস্তা ও এর শাখা-প্রশাখা নদীগুলোর পুনঃখনন ছাড়া ভাঙন ও বন্যা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
তিস্তা পাড়ের মানুষ এখন আশা করছেন, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এই মহাপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করবে, যাতে তারা তিস্তার ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায় এবং কৃষিজমি ও জীবন-জীবিকা রক্ষা হয়। রংপুরসহ উত্তরের পাঁচটি জেলার মানুষের আশা, অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে জনগণের দুর্দশা কমাবে এবং দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।