হলুদের চাদরে মোড়ানো সরিষার মাঠ, বাম্পার ফলের আশা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় মাঠে মাঠে সরিষার ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ, দৃষ্টিজুড়ে হলুদের অপার সৌন্দর্যের সমারোহ। ভোর সকালে সরিষাক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকালবেলার প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করেছে। এমন দৃশ্য কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এবার সরিষার বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের । উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে মনে হচ্ছে, প্রকৃতিকন্যা গায়ে হলুদবরণ মেখে সেজেছে। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহূর্ত। তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে , চলতি বছরে তাড়াশ উপজেলায় ১১হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর অর্জিত হয়েছিল ১০ হাজার ৩শত ১২ হেক্টর। চলতি বছরে এ পর্যন্ত অর্জিত জমির পরিমাণ হলো ১০ হাজার ৩০৫ হেক্টর। এর মধ্যে বারি-১৪ জাতের সরিষা ৫ হাজার ৯৫২ হেক্টর, বারি-১৭, ২ হাজার ৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় টরি-৭ জাতের ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে।
উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের কৃষক আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, এক সপ্তাহ ধরে সরিষা ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আরো অন্তত এক মাস ফুল থাকবে। তিন মাসের মধ্যেই সরিষা তোলা যায়। গত বছর সরিষার দাম ভালো ছিল। মনে হচ্ছে এ বছরেও দাম ভালোই হবে।
তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। ফলন পাওয়া যায় পাঁচ-সাত মণ। প্রতি মণ সরিষার বাজারমূল্য ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আমন ধান কাটার পারে ওই জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।সরিষা ঘরে তোলার পর ওই জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ও বোরোর ফলন ভালো হয়। এ বছর অধিক (উচ্চ) ফলনশীল আগাম জাতের সরিষার চাষ করছেন চাষিরা। এর মধ্যে বারি-১৪, ১৭, ১৮,বিনা-৯ জাত চাষে কৃষক মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি বিঘাতে ফলন পাওয়া যায় ৭ মণ থেকে ৮ মণ হারে।
এ ছাড়াও কৃষকেরা স্থানীয় টরি-৭ ও বারি-১৪ জাতের আবাদ করছেন বেশি। তবে বারি জাত ছাড়াও বিনা-৯, বারি-১৪, ১৭ ও ১৮ জাতের সরিষার ফলন ভালো হয়। কৃষক ফরহাদ,মজিবর,সাগর সহ আরও অনেক কৃষক জানায়, এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ, সার) খরচ হয় ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতি মণ দাম দাঁড়ায় ২ হাজর ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় অনেক বেশী। আর বিঘায় খরচ বাদে লাভের পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদাও পূরণ হয়। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর সরিষার চাষে আশানুরূপ ফলন হবে। বর্তমানে দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটাতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে সরিষা চাষ করেছে। আমরা আশা করছি, এবার সরিষার ফলন ভালো হবে এবং কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে।