উদ্বোধনের অপেক্ষায় উত্তর বঙ্গের প্রথম মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় চালু হতে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের প্রথম মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট। জানুয়ারি মাসে এ প্ল্যান্টের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে এ অঞ্চলের মৌ চাষিদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।
প্ল্যান্ট স্থাপনের পটভূমি
উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর বাজারে স্থাপিত এ প্রসেসিং প্ল্যান্টটি উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউজিডিপি) আওতায় জাইকার অর্থায়নে নির্মিত। উল্লাপাড়া কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা মৌ চাষি সমবায় সমিতির পরিচালনায় এটি পরিচালিত হবে।
প্ল্যান্ট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা, যা দিয়ে মূল ভবন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন ১ মেট্রিক টন মধু প্রসেসিং করার সক্ষমতা রয়েছে এ প্ল্যান্টের।
উল্লাপাড়ায় মৌ চাষের গুরুত্ব
উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রতিবছর ২৩-২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে সরিষার গাছে ফুল থাকায় স্থানীয় এবং বাহিরাগত প্রায় দেড় শতাধিক মৌ খামারি ৯-১০ হাজার মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু আহরণ করেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, সরিষার মৌসুমে উল্লাপাড়ায় প্রতিবছর ১৮০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়। এর স্থানীয় বাজার মূল্য ৪-৫ কোটি টাকা।
তবে, প্রসেসিং প্ল্যান্টের অভাবে এ মধু বড় শহরে নিয়ে প্রসেসিং করতে গিয়ে খামারিদের বাড়তি খরচ ও ঝামেলা পোহাতে হতো। ফলে এ অঞ্চলে একটি মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের।
কৃষি বিভাগের আশাবাদ
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, “জাইকার অর্থায়নে নির্মিত মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট জানুয়ারিতে চালু হবে। এটি চালু হলে মৌ চাষিরা সরাসরি মধু প্রসেসিং করতে পারবেন, যা তাদের ব্যবসায় গতি আনবে এবং লাভবান করবে।”
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার বলেন, “উত্তরাঞ্চলের প্রথম এ মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট চালু হলে শুধু স্থানীয় নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মৌ চাষিরাও উপকৃত হবেন। এখানে প্রসেসিং করা মধু বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।”
মৌ চাষিদের প্রতিক্রিয়া
উপজেলা মৌ চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান শিহাব এবং সাধারণ সম্পাদক ছোরমান আলী জানান, “প্ল্যান্টটি চালু হলে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। এটি মৌ চাষে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে এবং খামারিরা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন।”
উল্লাপাড়ায় স্থাপিত এই মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট উত্তরবঙ্গের মৌ চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। খামারিরা সাশ্রয়ী খরচে মধু প্রসেসিং করতে পারবেন এবং দেশে-বিদেশে বাজারজাত করার সুযোগ পাবেন। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।