প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ২৩:২০

দখল ও দূষনের বেড়াঁজালে মৃতপ্রায় নাটোরের নন্দকুজাঁ নদী

মনিরুল ইসলাম, নাটোরঃ
দখল ও দূষনের বেড়াঁজালে মৃতপ্রায় নাটোরের নন্দকুজাঁ নদী

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী নন্দকুজাঁ নদী আজ মৃতপ্রায়। নদীর দুপাশ দখলদারদের থাবায় ভরে গেছে। স্থাপনা নির্মাণ, দূষিত বর্জ্য এবং ময়লা-আবর্জনার স্তূপ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করছে। অপরিকল্পিত দখল ও দূষণের ফলে নদীর প্রশস্ততা সংকুচিত হয়ে পড়েছে এবং বর্ষার পানিতেও স্রোত হারিয়ে ফেলেছে এই নদী।

দখল ও দূষণের ভয়াল চিত্র

চাঁচকৈড় হাটের ময়লা-আবর্জনা এবং দূষিত বর্জ্য নিয়মিত ফেলা হচ্ছে নদীতে। বিষাক্ত বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক, এবং ককসিট ফেলার ফলে নদী ক্রমেই ভরাট হয়ে চলেছে। পদ্মার উৎসস্থল রাজশাহীর চারঘাটে স্লুইসগেট নির্মাণের কারণে নন্দকুজাঁ নদীতে জলপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া, পলি জমে নদীর দুই পাড় সংকুচিত হয়ে খালে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

নদীর বর্তমান অবস্থা ও দখলদারিত্ব

ভূমিদস্যুরা নদীর দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। এ অঞ্চলে শহর, হাট-বাজার, মিল-কারখানা এবং গবাদি পশুর খামারের বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে নদী তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রতিবাদ এবং বাঁধা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

সংগঠনের উদ্যোগ ও দাবি

নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান মজনু এবং সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, “নন্দকুজাঁ নদী বাঁচলে বৃহৎ চলনবিল বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচবে এবং জলবায়ু রক্ষা পাবে।” তারা দাবি করেন, দখলদারদের উচ্ছেদ, বর্জ্য ফেলা বন্ধ, এবং নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহের পথ সুগম করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রশাসনের আশ্বাস

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, “পৌরসভার ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা চলছে। পাশাপাশি, দখল-দূষণমুক্ত রাখতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।”
নাটোর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, “নন্দকুজাঁসহ জেলার সকল নদী রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপসংহার

নন্দকুজাঁ নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। দখল ও দূষণমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনলে বৃহৎ চলনবিল অঞ্চলের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আসবে।

উপরে