প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ২৩:৫৪

সিরাজগঞ্জে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী জাহানারা খাতুন

তাড়াশ সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা:
সিরাজগঞ্জে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী জাহানারা খাতুন

সিরাজগঞ্জের  শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের গৃহবধু জাহানারা খাতুন (৫২) কুমড়ো বড়ি তৈরি  করে দারিদ্র্যতাকে জয় করে স্বাবলম্বী হয়ে এলাকায় ব্যাপক  পরিচিতি লাভ করেছেন। জাহানারাকে অনুসরণ করে এলাকার অনেক নারী এখন কুমড়ো বড়ি তৈরি  করে সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। জাহানারার তৈরি কুমড়ো বড়ির সুখ্যাতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগছি গ্রামে কুমড়ো বড়ির কারখানায় কথা হয় জাহানারার সাথে। তিনি জানান, চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে নানা অভাব-অনটনে দিনমজুর স্বামী জহুরুল ইসলামের সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তার। এরপর প্রায় ১৫ বছর আগে এক নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে ধার দেনা করে জাহানারা তার বাড়িতে কুমড়ো বড়ি তৈরী করে তা হাটে বাজারে বিক্রি শুরু করে। এসময় তিনি ঢেকিতে ডাল গুড়ো করতেন। তারপর গুড়ো ডাল ও চাল কুমড়ো পাটায় বেটে তাতে কালোজিরা মিশিয়ে কুমড়ো বড়ি তৈরী করে রোদে শুকিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন। এতে একদিকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও অন্যদিকে সময় বেশী লাগায় চাহিদা মোতাবেক কুমড়ো বড়ি তৈরী করে সরবরাহ করা সম্ভর হতো না।একপর্যায়ে তার কুমড়ো বড়ির চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তিনি ডাল গুড়ো করা এবং ডালের গুড়ো ও চাল কুমড়ো মিশিয়ে ফিনিশিং করার দুইটি ডিজেল চালিত মেশিন কিনেন। বর্তমানে মেশিনে ডাল গুড়ো করে চাল কুমড়োর সাথে মিশিয়ে বড়ি তৈরী করে ৩ দিন টানা রোদে শুকিয়ে চাহিদামত কুমড়ো বড়ি বাজারজাত করছেন।জাহানারা খাতুন আরও জানান, বর্তমানে তার কুমড়ো বড়ির কারখানায় ১৫ জন নারী শ্রমিক কাজ করছে। কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে তিনি চার ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এরমধ্যে তার বড় দুই ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। এবং ছোট ছেলে ও মেয়ে কলেজে পড়ছে। এছাড়াও তালগাছি গ্রামে ১২ শতক জায়গা কিনে বসতবাড়ি নির্মান করেছেন। এবং পাশাপাশি বাড়িতে করেছেন গরুর খামার।
ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী তার কারখানায় তৈরি ডালের বড়ি 'জাহানারা কুমড়ো বড়ি' নামে খ্যাতি লাভ করায় সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়তই জাহানারার কুমড়ো বড়ি কিনতে ভীড় করছেন তার কারখানায়। এছাড়াও প্রতি ৩ দিন পর পর তার উৎপাদিত কুমড়ো বড়ির বড় অংশ ঢাকার ব্যবসায়ীরা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন বলে তিনি জানান। আশ্বিন মাস থেকে ফালগুন মাস পর্যন্ত ৬ মাস কুমড়ো বড়ির চাহিদা বেশী হওয়ায় কারখানায় ডালের বড়ি তৈরীর ধুম পরে যায়।
কিভাবে তৈরী করেন ডালের বড়ি জানতে চাইরে তিনি জানান, ৫০ কেজি এ্যাংকর ডালের গুড়ার সাথে ৭/৮ কেজি চাল কুমড়ো মিশিয়ে মেশিনের সাহায্যে ফিনিশিং করা হয়। তারপর বাড়ির পাশেই বাৎসরিক ১৫ হাজার টাকায় প্রায় এক বিঘা জমি ভাড়া নিয়েছি। ওই জমিতে সারি সারি ঢেউ টিনের উপর বড়ি তৈরী করে শুকাতে দেই। টানা ৩ দিন রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়। তিনি আরও বলেন, তিন হাজার টাকা মূল্যের ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা এ্যাংকর ডালে ৪৫ কেজি কুমড়ো বড়ি উৎপাদন হয়। বর্তমানে তার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৭ বস্তা (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি) এ্যাংকর ডাল ও এক বস্তা মাসকলাই ডালের কুমড়ো বড়ি তৈরী করতে পরেন।  প্রতি কেজি এ্যাংকর ডালের কুমড়ো বড়ির উৎপাদন ব্যয় হয় প্রায় ৮৫ টাকা। তিনি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি বড়ি ১০৫ টাকায় দরে বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা ওই বড়ি বাজারে ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। অন্যদিকে মাসকলাই ডালের দাম অনেক বেশী হওয়ায় এবং চাহিদা কম থাকায় তা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তার কারখানায় সারা বছরই কুমড়ো বড়ি তৈরী হয়। তবে শীতকালে বড়ির চাহিদা অনেক বেশী হওয়ায় ডালের বড়ি তৈরীর কাজে তার কারখানায় ১৫ জন নারী শ্রমিকের পাশাপাশি তার স্বামী ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন।
এদিকে, কুমড়ো বড়ি কিনতে আসা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফাসহ ক্রেতারা জানান, জাহানারার কুমড়ো ডালের বড়ির গুনগত মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা অনেক বেশী। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন,  অপরদিকে জাহানারা খাতুনের কুমড়ো ডালের বড়ির ব্যবসা চলমান রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

উপরে