প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০০:৩৮

চলনবিলে বিলুপ্ত প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছ

ফিরোজ আল আমিন, চলনবিল থেকেঃ
চলনবিলে বিলুপ্ত প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছ

উত্তরবঙ্গের বৃহৎ মিঠাপানির জলাধার চলনবিল একসময় ১৩০ প্রজাতির দেশীয় মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু গত তিন দশকে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে ৪০ প্রজাতিতে নেমে এসেছে। স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত হয়েছে ১১টি প্রজাতির মাছ।

চলনবিল সংশ্লিষ্ট মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ৩৯টি বিল, ১৬টি নদী ও ২২টি খাল মিলিয়ে ১৩০ প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার ছিল। তবে নদীনালা ও খালবিল দখল-দূষণ, নিষিদ্ধ উপায়ে মা মাছ ও পোনা নিধনের কারণে ৯০ প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়। বর্তমানে মেনি, পুঁইয়া, চিতল, ফোলি, পাবদা, বেলে, কাঁচকি, মলা-ঢেলা, দাঁড়কিনা, কালিবাউশ, বাঁশপাতা, পাঙ্গাসসহ ৪০টি মাছের প্রজাতি খুব কমই দেখা যায়।

জেলেদের পেশা বিলুপ্তির পথে
একসময় চলনবিল এলাকার জেলেরা উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে মাছের অভাবে তাদের পেশাও বিলুপ্তপ্রায়। নিষিদ্ধ উপকরণ দিয়ে পোনা, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক পর্যন্ত নিধন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে।

বাউৎ উৎসবের হতাশা
চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী বাউৎ উৎসবেও মাছের ঘাটতি স্পষ্ট। রংপুর ও গাইবান্ধা থেকে তিন ট্রাক শিকারি এসে সারা দিনে মাত্র তিনটি ছোট বোয়াল পেয়েছেন। এই পরিস্থিতি মাছ শূন্যতার চিত্র তুলে ধরেছে।

বিলুপ্তির কারণ ও সমাধানের আশ্বাস
চলনবিলের মাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকার, জলাশয় দখল-দূষণ, ভরাট, এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। একসময় যেখানে ১ লাখ ৭৭ হাজার জেলে মাছ শিকার করতেন, বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৭৫ হাজারে।

তবে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহিনূর রহমান জানিয়েছেন, দেশীয় মাছ সংরক্ষণে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর অঞ্চলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এবং কৃষি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

উপসংহার
চলনবিলের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার এবং দেশীয় মাছ সংরক্ষণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। প্রকৃতি ও মানুষের এই সম্পদ টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।

উপরে