প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ০০:০৭

আবারও শুরু বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের স্বপ্নযাত্রা

এনামুল হক, বিশেষ সংবাদদাতাঃ
আবারও শুরু বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের স্বপ্নযাত্রা

দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে অবশেষে নতুন করে যাত্রা শুরু করল বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। নানা জটিলতা পেরিয়ে সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুর মাধ্যমে আবারও গতি পেল এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি।

গত ৭ এপ্রিল থেকে প্রকল্প এলাকার ভূমি মালিকদের জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৭ সালের ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন’-এর ৭ ধারা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত হয়ে দাবির সপক্ষে প্রমাণপত্র পেশ করতে বলা হয়েছে।

রেল প্রকল্পের অগ্রগতি

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুরো রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রায় ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে বগুড়ায় ৪৭৯ একর এবং সিরাজগঞ্জে ৪২১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান।

মূল প্রকল্পের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ১,৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থায়নের একটি অংশ আন্তর্জাতিক ঋণের মাধ্যমে নির্ভর করায় সেখানে কিছু অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও, সরকার বিকল্প উৎস থেকে অর্থায়নের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।

রেলপথ সচিব ফাহিমুল ইসলাম জানিয়েছেন, “এই প্রকল্পটি বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর একটি। অর্থায়ন নিয়ে কিছু জটিলতা থাকলেও আমরা দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছি।”

যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা

নতুন রেলপথটি নির্মিত হলে বগুড়া থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১১২ কিলোমিটার কমে যাবে। ফলে যাত্রায় সময় সাশ্রয় হবে আনুমানিক ৪ ঘণ্টা। এতে শুধু যাতায়াতই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য পরিবহন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবার ক্ষেত্রেও অভাবনীয় উন্নতি ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পটির আওতায় মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে—এর মধ্যে বগুড়ায় ৪টি ও সিরাজগঞ্জে ৫টি স্টেশন থাকবে। পাশাপাশি বগুড়ার রানীরহাট এবং সিরাজগঞ্জে দুটি জংশন স্থাপন করা হবে, যা পুরো উত্তরাঞ্চলের রেলযোগাযোগের চিত্রই পাল্টে দিতে পারে।

জনগণের আশাবাদ

স্থানীয় বাসিন্দারা এই রেলপথকে ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জবাসী যাতায়াতের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত রেল সংযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকা ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে একটি দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা চালু হবে।

এই প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী শেষ করতে পারলে ২০২৬ সালের মধ্যেই রেল চলাচল শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপরে