সৈয়দপুর শহরে টিআর প্রকল্পে দৃশ্যমান উন্নয়ন অগ্রাধিকার পেয়েছে অবহেলিত এলাকা, নাগরিক সন্তুষ্টি

সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তেমনি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর শহরের ‘টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) প্রকল্প’-এ দেখা দিয়েছে স্বচ্ছতা ও দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোঁয়া। এই প্রকল্পে এবার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে দীর্ঘদিন অবহেলিত এলাকাগুলোকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিচু কলোনীতে টিআর প্রকল্পের আওতায় রাস্তা সলিং কাজ পরিদর্শন করা হয়। সেখানে হাফেজ রমজানের বাড়ি থেকে হান্নানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি সলিং করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কালাম ড্রাইভার, ছাত্তার ও ইমরান বলেন, "এই রাস্তাটি বহু বছর অবহেলিত ছিল। বর্ষাকালে চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে যেত। এবার পৌর প্রশাসকের উদ্যোগে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হয়েছে।"
এছাড়া পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী ওমর রোডের পানি ট্যাংকির পাশের রাস্তা ব্লক ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বহুদিন পরে টেকসই একটি রাস্তা পেয়েছেন তারা, যা যাতায়াত ব্যবস্থায় নতুন গতি এনেছে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের রেল কলোনীতেও সিসি ঢালাইয়ের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তারা কাঁচা রাস্তা দিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। এবার পৌর প্রশাসক অবহেলিত এলাকার দিকে নজর দিয়েছেন, এজন্য তাঁরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কয়া গোলাহাট সরকার পাড়ায় তৈরি করা হয়েছে নতুন ড্রেন। স্থানীয় বাসিন্দা মো. রানা জানান, এখানে কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের বাস। এতদিন পানি নিষ্কাশনের কোনও সুব্যবস্থা ছিল না। এবার কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।
পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বাড়তি নাগরিক সুবিধা দিতে রান্নাঘরে টাইলস বসানো হয়েছে এবং বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নতুন বাবুপাড়ার প্রধান সড়কেও বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ মাছ ও খাসির মাংসের বাজারে নতুন টিনের ছাউনি নির্মাণ করায় ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। পান বাজারেও পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে ড্রেন ও স্লাব নির্মাণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হচ্ছে শহরের পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান ড্রেনটির সংস্কার। এটি শহরের সাতটি ওয়ার্ড ও মূল বাজার এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে নাব্যতা বৃদ্ধির ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করছেন পৌরবাসী।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে আলাউদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, আশরাফুল আলম, মো. নওশাদ, এনামুল হক, আবিদ হোসেন প্রমুখ বলেন, "এতদিন এই উন্নয়ন কল্পনাও করতে পারিনি। এবার প্রশাসকের আমলে কাজগুলো সত্যিই দৃশ্যমান ও জনবান্ধব।"
পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌর এলাকার ১৫টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ২৮টি টিআর প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একাধিক ব্যক্তি জানান, আগে টিআর প্রকল্পে দলীয়করণ বেশি থাকলেও এবার প্রকৃত উন্নয়নই হয়েছে। কাজ হচ্ছে খোলামেলা, যা নাগরিকরা নিজের চোখে দেখতে পারছেন।
পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, "এবার টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।"