টানা বৃষ্টিতে বরেন্দ্র অঞ্চলে তলিয়ে গেছে বোরো ধানের ক্ষেত, কৃষক দুশ্চিন্তায়

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে হাজার হাজার একর বোরো ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সময়মতো ধান কাটার অক্ষমতায় ফসল নষ্টের আশঙ্কায় বিপাকে পড়েছেন লক্ষাধিক কৃষক।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চিত্র
তানোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর জেলা মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।
গত চারদিনে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৮৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
নিম্নভূমি ও বিল এলাকায় হাঁটু-কমরোত্থ পানিতে কৃষকেরা মাঠে চলাফেরা করতে পারছেন না, ফলে ধান কাটার শ্রমিকও মেলেনি।
অনেক ক্ষেতেই পাকা ধানে বীজ গজানো শুরু, যা ফলন ও গুণগতমানে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
কৃষকের ভাষ্য
তানোরের গোপালপুরের জাহেন আলী:
“সাত বিঘার ধানের মধ্যে আর মাত্র দেড় বিঘা কাটা ছিলো, তবে প্রতিদিন বৃষ্টি, রোদ না থাকায় ধান শুকানো গেল না। জমিতে পানি নিষ্কাশন করতে আইল কেটে খরচ বাড়ছে, শ্রমিকও দেখা যাচ্ছে না।”
নিয়ামতপুরের দুরুল হোদা:
“ঝড়-বৃষ্টিতে ধান শুয়ে পড়ে, মাড়াইযন্ত্র চালানো যাচ্ছে না, জমিতেই ফসল পচে যাচ্ছে এবং হাটবাজারে নতুন ধানের সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ
ড. আজিজুর রহমান (অতিরিক্ত পরিচালক):
“বৃষ্টির পানি জমা কাটাতে ‘আইল কাটা’ এবং দ্রুত নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিতে হবে। রোদ বেরুলেই দ্রুত ধান কেটে তুলুন, অন্যথায় ধান পচে যায়।”
উম্মে ছালমা (উপ-পরিচালক):
“যেসব খেতে পানি জমেছে, সেখানে আইল বা খৈল কেটে পানি বের করতে বলছি। খড় উঠে নাড়ানো ও দ্রুত মাড়াইয়েরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।”
আবহাওয়া অফিসের তথ্য
২২ মে: ৮৪ মিমি, ২৩ মে: ৩১.৮ মিমি, ২৪ মে: ১২ মিমি, ২৫ মে: ২৫ মিমি, ২৬ মে (দুপুর পর্যন্ত): ৩৪ মিমি।
আগামী এক–দুই দিনেও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো ফসলের স্বস্তি এবার টানা বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে। তাত্ক্ষণিক সরকারি বা স্থানীয় উদ্যোগে পানি নিষ্কাশন ও রোদ–বাস্তা নিশ্চিত করতে না পারলে ফসলের বড় অংশই জমিতে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি দপ্তরের নির্দেশনা মেনেই যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটার ও মাড়াইয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কৃষকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।