বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় মো. জাকারিয়া (৩৫) নামের এক রাজমিস্ত্রিকে অপহরণ করে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করায় তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাবতলী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং অপরাধে জড়িতদের শনাক্তপূর্বক আটক করে। গত শুক্রবার (৩১ মে) দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

জানা গেছে, গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নের কর্ণিপাড়া গ্রামের সবির হোসেনের ছেলে মো. জাকারিয়া একজন পেশাদার রাজমিস্ত্রি। গত ২৮ মে (মঙ্গলবার) রাত আনুমানিক ৮টায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে কাজের কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন জাকারিয়া। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

পরদিন ২৯ মে সকাল ৯টায় জাকারিয়ার ফোন নম্বর থেকে তার স্ত্রী নিলুফা খাতুনের মোবাইলে একটি কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে একজন পুরুষ কণ্ঠ জানায়, জাকারিয়াকে মুক্তি দিতে হলে ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে হবে। স্বামীকে জীবিত ফেরত পেতে স্ত্রী বাধ্য হয়ে ওই ব্যক্তির দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠান।

মুক্তিপণের পর আবার নতুন দাবি

প্রথম দফায় টাকা পাওয়ার পর কিছু সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও বিকেল নাগাদ আবার জাকারিয়ার নম্বর থেকেই ফোন আসে। এবার অপহরণকারীরা আরও ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জাকারিয়াকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। ফোনে জাকারিয়াকে নির্যাতনের আওয়াজ এবং কান্না শোনান অপহরণকারীরা।

থানায় অভিযোগ, অভিযানে নাটকীয় উদ্ধার

ঘটনার পর দিন, ২৯ মে, জাকারিয়ার স্ত্রী নিলুফা খাতুন গাবতলী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেরাজুল হক তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করেন। প্রযুক্তির সহায়তায় বিকাশ লেনদেনের সূত্র ধরে পুলিশ ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করে এবং একটি বিশেষ অভিযানে জাকারিয়াকে উদ্ধার করে।

গ্রেফতার তিন অপহরণকারী

ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন অপহরণকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন:

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রথিরাম পাঠানপাড়া গ্রামের আ. খলিলের ছেলে বিনজু মিয়া ওরফে রকি (২৫)

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বনমরিচা গ্রামের খোকা প্রামানিকের ছেলে রাজু আহম্মেদ (২৩)

একই গ্রামের গোলাম মোস্তাফার ছেলে রাসেল শেখ (২৬)

তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (৩১ মে) তাদের আদালতে হাজির করলে বিচারক তিনজনকেই জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশের বক্তব্য

গাবতলী থানার ওসি সেরাজুল হক জানান, “ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের শনাক্ত করে অভিযান চালাই। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির এই ঘটনায় গাবতলী উপজেলার জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা পুলিশের সফল অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।