লিচুর রমরমা বাজার শেরপুরে, দিনে বিক্রি প্রায় ১০ লাখ টাকা

গ্রীষ্মের শুরুতেই জমে উঠেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার লিচুর বাজার। শহরের প্রতিটি বাজারে এখন টসটসে, রসালো লিচুর সমাহার। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর লিচুর উৎপাদন ভালো হওয়ায় সরবরাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেচাকেনাতেও এসেছে গতি। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে শেরপুর শহরে।
বিক্রেতাদের মতে, লিচুর মৌসুম মাত্র এক মাসের হওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে ব্যস্ত। শহরের নতুন বাজার, বাইপাস মোড়, ধুনুট মোড়সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে লিচুর কেনাবেচা। একজন খুচরা বিক্রেতা দিনে গড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো লিচু বিক্রি করছেন।
বিভিন্ন জেলার উন্নত জাতের লিচুর সমাহার
শুধু স্থানীয় নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে উন্নত জাতের লিচু। দিনাজপুর, পাবনার ঈশ্বরদী ও ঠাকুরগাঁওয়ের ধাতিরহাট, ভুললি ও কচুবাড়ী এলাকা থেকে আসা লিচু বাজারে বৈচিত্র্য এনেছে।
বাজারে পাওয়া যাচ্ছে—
মাদ্রাজি: ৩০০–৩২০ টাকা (প্রতি ১০০টি)
মুম্বাই: ৪০০–৪২০ টাকা
বেদেনা: ৫০০–৫৫০ টাকা
চায়না থ্রি (হাই কোয়ালিটি): ১০০০ টাকা
চায়না থ্রি (মিডিয়াম): ৮০০ টাকা
সাধারণ মানের লিচু: ৪০০–৫০০ টাকা
ব্যবসায়ীদের মুখে মৌসুমি হাসি
নতুন বাজারের লিচু বিক্রেতা জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন,
“এবারের লিচুর মান খুব ভালো। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতা সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়।”
আরেক বিক্রেতা রেজাউল করিম বলেন,
“চায়না থ্রি লিচু একটু দামি হলেও চাহিদা বেশি। অনেকেই ৮০০–১০০০ টাকায় কিনছেন। এই এক মাসই আমাদের জন্য মূল রোজগারের সময়।”
ক্রেতাদের আগ্রহ ও প্রশংসা
শহরের ধুনুটমোড় এলাকার বাসিন্দা আফরোজা খানম বলেন,
“এবারের লিচু গন্ধ, বর্ণ, স্বাদ—সব দিক থেকেই চমৎকার। দাম একটু বেশি মনে হলেও মান অনুযায়ী ঠিকই আছে।”
এক কলেজছাত্র মেহেদী হাসান জানান,
“বন্ধুদের সঙ্গে এসে হাফ কেজি লিচু কিনেই রিকশায় বসে খেয়ে ফেলেছি! অনেকদিন পর এত টাটকা লিচু খেলাম।”
এক গৃহিণী রাবেয়া সুলতানা বলেন,
“চায়না থ্রি লিচু দামি হলেও খেতে খুব ভালো। আত্মীয়দের বাড়িতেও পাঠিয়েছি।”
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন,
“বয়স হয়েছে, খাওয়ার বিধিনিষেধ আছে, তবু লিচুর লোভ সামলানো কঠিন। এবারের লিচুর স্বাদ পুরনো দিনের মতোই লাগছে।”
চাষিরাও খুশি
উৎপাদন ভালো হওয়ায় চাষিরা এবার সন্তোষজনক দাম পাচ্ছেন। বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় দামও নিয়ন্ত্রণে, ফলে বিক্রেতা ও ক্রেতা—দুই পক্ষই সন্তুষ্ট।