সৈয়দপুরে রেলওয়ের লোহা চুরির ঘটনায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা, আটক ২, বরখাস্ত ৪

নিলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের লোহা চুরির ঘটনায় গত ১২ দিনে দুই কর্মকর্তা ও ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন আটক হয়ে জেল হাজতে আছেন, চারজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তিনজনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনা শুরু হয় গত ৩০ জুন, অর্থ বছরের শেষ দিনে, যখন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সিএন্ডডাব্লুই মেশিন সপ থেকে লোহা চুরি করার সময় এক অস্থায়ী শ্রমিক, জাভেদ (৩৩) আটক হন। পরবর্তীতে জাভেদকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিসি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে আরো তিনজনের নাম উঠে আসে। তারা হলেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার হাসান আল মামুন (৪৫), ওয়াগন সপ বাফার সেকশনের হুমায়ুন কবির (৪২) এবং সিএন্ডডাব্লুই মেশিন সপের সাইফুল ইসলাম (৪২)। এই তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং জাভেদকে চাকরি থেকে চ্যুত করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মামলা ও আরও অভিযুক্তরা:
জাভেদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, রেলওয়ের চোরাই লোহা ক্রেতা হিসেবে মোহন চন্দ্র (৪৮), মো. মুন্না (৪৫), মো. এরশাদ (৪৬) ও মো. জাভেদ আকতারও অভিযুক্ত হন। এর ফলে ৩০ জুন রাতে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হন সিএন্ডডাব্লুই মেশিন সপের উর্ধ্বতন উপসহকারি প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে, ২৩ জুন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বগি সপ থেকে লোহা চুরির অভিযোগে দুই অস্থায়ী শ্রমিক, জসিয়ার রহমান (৩৪) ও মো. সাগর (৩৩) আটক হন এবং তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। এই দুইজনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গোডাউনে পাচার:
১৯ জুন রেলওয়ে গোডাউনে রক্ষিত দুই পিকআপ ভর্তি রেললাইন পাচারকালে উর্ধ্বতন উপসহকারি প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা আটক হন। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে তদন্ত শুরু হয় এবং সুলতান মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই দিন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর দপ্তরের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা:
গত ১৯ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে রেলওয়ের লোহা চুরির দায়ে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জন আটক হয়েছেন এবং ৩ জন অস্থায়ী শ্রমিকসহ ৪ জন রেলওয়ের স্থায়ী কর্মচারীকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশিষ্টজনদের মন্তব্য:
স্থানীয় বিশিষ্টজনরা অভিযোগ করেছেন যে, দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এবং সাধারণ মানুষ এতে বেকায়দায় পড়ছে। তারা মনে করেন যে, রেলওয়ের লোহা চুরিও এখন বেশি হয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে।
রেলওয়ে বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়কের মন্তব্য:
এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন, "আমরা রেলওয়ের সম্পদ রক্ষার্থে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। এই ধরনের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"