প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২৫ ০১:৩০

গাইবান্ধায় ৬৭ হাজার ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি চারা ধ্বংস, পরিবেশ রক্ষায় কঠোর প্রশাসন

মশিউর রহমান, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধাঃ
গাইবান্ধায় ৬৭ হাজার ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি চারা ধ্বংস, পরিবেশ রক্ষায় কঠোর প্রশাসন

পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের রোপণ, উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়নে দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে মাঠপর্যায়ের অভিযান। তারই অংশ হিসেবে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলায় পাঁচটি বেসরকারি নার্সারিতে প্রস্তুতকৃত প্রায় ৬৭ হাজার চারা ধ্বংস করা হয়েছে

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে উপজেলার ৮ নম্বর ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিপি) মো. আল মুজাহিদ সরকার, উপজেলা কৃষি অফিসার অপূর্ব ভট্টাচার্য, সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজ উদ্দিন খন্দকার, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এনামুল কবির তুহিন, উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আবদুর রউফ রহুল আমিন, আবু তাহের সরকার ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

কেন নিষিদ্ধ এই গাছ দুটি?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ মাটি থেকে মাত্রাতিরিক্ত পানি শোষণ করে, ফলে মাটির আর্দ্রতা কমে গিয়ে তা রুক্ষ হয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য, কৃষিকাজ ও পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু ও পরিবেশ সংক্রান্ত অঙ্গীকারের অংশ হিসেবেও এই গাছ দুটির বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

প্রশাসনের বক্তব্য

সাদুল্লাপুর ইউএনও কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন,

“ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি চারা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এসব গাছ মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে, পরিবেশ ও প্রতিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই সরকার এসব গাছ উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।”

উপজেলা কৃষি অফিসার অপূর্ব ভট্টাচার্য জানান,

“২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা ধ্বংস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজকের অভিযানে কৃষ্ণপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের 'সততা নার্সারি'সহ মোট পাঁচটি নার্সারিতে প্রায় ৬৭ হাজার চারা ধ্বংস করা হয়েছে। এটি একটি চলমান কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে উপজেলার প্রতিটি নার্সারিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”

জনসচেতনতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এ ধরনের গাছ রোপণকারীদের সচেতন করতে এবং পরিবেশবান্ধব বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করতে প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সরকার অনুমোদিত পরিবেশবান্ধব ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছের চারা রোপণে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

সচেতন নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীরাও এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের এই কঠোর অবস্থান দেশে একটি টেকসই ও সুস্থ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

উপরে