পটুয়াখালির কলাপাড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযান চলমান থাকলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিষিদ্ধ মাদকের বিস্তার। উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের অন্তর্গত প্রায় প্রতিটি এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও চোলাই মদের মতো প্রাণঘাতী মাদকদ্রব্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিনব কৌশলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকায় রমরমা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে দু-একজনকে গ্রেফতার করলেও মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এলাকার যুবসমাজ।
একাধিক মাদক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা নিয়মিত স্থানীয় কিছু তথাকথিত ‘সোর্স’-এর মাধ্যমে প্রশাসনের অভিযান সম্পর্কে আগাম বার্তা পান। বিনিময়ে ওই সোর্সদের মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়। এতে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান প্রায়ই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গোপনভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকা, মহিপুর, ধুলাসার, চম্পাপুর, ডালবুগঞ্জ, মিঠাগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে খুচরা ও পাইকারি মাদক কেনাবেচা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। ইয়াবার প্রতিপিস পাইকারি মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। পাশাপাশি নদীপথে মাদক চোরাচালান ও কোমলমতি শিক্ষার্থী ও নারীদের মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করার মতো উদ্বেগজনক তথ্যও পাওয়া গেছে।
এছাড়া গাঁজা ও চোলাই মদের প্রাপ্যতাও এলাকায় উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক টোপলা গাঁজা বিক্রি হচ্ছে ১০০-২০০ টাকায়। এসব মাদক সেবনের ফলে উপজেলায় চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত এক মাসেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদ হাসান বলেন, "মাদকের বিস্তার রোধে আমরা নতুন কৌশল গ্রহণ করছি। সকল অফিসারদের সঙ্গে মিটিং করে এলাকায় মাদক বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোর্সদের বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।"
অন্যদিকে কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, "আমরা নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো মাদক ব্যবসায়ী বা অপরাধীকে গ্রেফতার করছি। সোর্সদের তৎপরতা নিয়েও আমরা সতর্ক আছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
এদিকে এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন, শুধু অভিযান পরিচালনা করলেই চলবে না, পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িতদের পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে যুবসমাজ ও আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে না।