একই সাথে দুই স্কুল থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন: সোনাতলার দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

একই সময় দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে দুই দিক থেকেই বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মালিকী জাহান ও আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
জানা গেছে, এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী আকন্দ সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে লিখিত নোটিশ প্রদান করেন। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, নোটিশ পাওয়ার পর উভয় শিক্ষকই তাঁদের বেতনভাতা ফেরত দিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত চালানের কপিও দাখিল করেছেন।
মালিকী জাহানের ‘দ্বৈত’ চাকরির গল্প
অভিযোগ অনুসারে, শিক্ষক মালিকী জাহান ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সারিয়াকান্দি উপজেলার নওখিলা পি. এন. উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরের মার্চ থেকে তাঁর এমপিও কার্যকর হয় এবং তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন। অথচ পূর্বেই, ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি সোনাতলার সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং এখনও সেখানে কর্মরত রয়েছেন।
এই দুই প্রতিষ্ঠানে একসাথে কর্মরত থেকে তিনি কীভাবে একসাথে দু’দিক থেকে সরকারি বেতন নিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর নওখিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইনডেক্স নম্বর এন৫৬৮২৬২২১ এবং সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইনডেক্স নম্বর এন৫৬৮৫২৯৬৩।
আবুল কালাম আজাদের আরেকটি এমপিও 'খেল'
একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি সবুজ সাথী উচ্চ বিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমপিওভুক্ত হয় এবং তিনি সেই সময়ের বকেয়াসহ নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন।
তবে একই সময় তিনি গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বি.এ.আর. খান উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানে তাঁর ইনডেক্স নম্বর এন৫৬৮২৬২৭১, এবং ২০২২ সালের মে মাস থেকে তাঁর এমপিও কার্যকর হয়। ফলে তিনিও একই সময় দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন।
শিক্ষা অফিসের বক্তব্য
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রমজান আলী আকন্দ বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা উভয় শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। তারা জবাব দিয়েছেন এবং বেতন ফেরতের প্রমাণপত্রও জমা দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “তাদের জবাব শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিজি স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
প্রশ্ন রয়ে যায়
এ ঘটনায় শিক্ষাখাতে অনিয়ম ও প্রতারণার চিত্র আবারও সামনে এলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অর্থ ফেরত দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও এমন প্রতারণা হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।