রাজশাহীতে ঢাকামুখী বিশেষ ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে মঙ্গলবার সকালে এক তরুণ ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার চালককে ‘ব্রেক ধরেন’ বলে আহ্বান জানান। ট্রেন এগিয়ে যেতে থাকলে তিনি হাতে থাকা পাথর ছুঁড়ে মারেন ট্রেনটির দিকে।

তরুণটি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে বক্তব্যও দেন। পরে ট্রেনটি থেমে গেলে তাকে ট্রেনের অন্য যাত্রীরা ঘিরে ধরেন এবং বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে ওই তরুণ আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে পাশের প্ল্যাটফর্মে গিয়ে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে বসেন।

ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিষয়টি বিশ্লেষণ করছে এবং ভিডিওর সত্যতা মিললে ওই তরুণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী রেলওয়ে থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান বলেন, অভিযুক্ত তরুণ শুরু থেকেই ঝামেলা করছিলেন। ঘটনাটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওসি জানান, ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ১০ বছর  যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এমনকি পাথরের আঘাতে কারও মৃত্যু হলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ফাঁসিরও বিধান রয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ অপরাধ করলে তার অভিভাবকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, “ভিডিওটি আমরা দেখেছি। তবে সরেজমিন তদন্ত হয়নি। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি। ভিডিওটি সত্য হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীতে জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বিশেষ ট্রেনটি পছন্দ না হওয়ায় ছাত্র-জনতার একাংশ স্টেশনে বিক্ষোভ করেন। কেউ কেউ ট্রেনের সামনে বসে পড়েন, কেউবা শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে একটি অংশ আন্তনগর ট্রেনে যাওয়ার দাবিতে পাটচালিত ট্রেনটি আটকে রাখেন। এ সময় বিক্ষোভকারী ওই তরুণ একাই রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েন। এতে প্রায় ৪৫ মিনিট ট্রেনটি আটকে থাকে।

সরকার ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনতে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে। রাজশাহীর জন্য নির্ধারিত ট্রেনটি ছিল ‘বাংলা ট্রেন’ নামে একটি সাধারণ ট্রেন। কিন্তু অনেকেই বনলতা ও সিল্কসিটির মতো আন্তনগর ট্রেন চাচ্ছিলেন। আপত্তির মুখে পরে ৩৫ জনকে সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে করে ঢাকায় পাঠানো হয়, আর বাকি যাত্রীরা পূর্ব নির্ধারিত ট্রেনেই যাত্রা করেন। সেই ট্রেনে রাজশাহী স্টেশন থেকে প্রায় ২০০-২৫০ জন উঠেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৮ জোড়া ট্রেনের জন্য মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।