প্রকাশিত : ২২ আগস্ট, ২০২৫ ০০:৩৬

থানার ব্যারাকেই নারী কনস্টেবলকে বারবার ধর্ষণ, অভিযুক্ত সহকর্মীকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
থানার ব্যারাকেই নারী কনস্টেবলকে বারবার ধর্ষণ, অভিযুক্ত সহকর্মীকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এক নারী কনস্টেবলকে বিয়ের প্রলোভনে টানা ছয় মাস ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সহকর্মী এক পুরুষ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর জেলা পুলিশের নজরে আসে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী উভয় পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ১৯ আগস্ট ভুক্তভোগী নারী কনস্টেবল থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সহকর্মী কনস্টেবল সাফিউর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন।

এসপি বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জানার পরপরই উভয় পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই ঘটনাতেও একইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর বর্ণনা

অভিযোগপত্রে নারী কনস্টেবল জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আশুলিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন। এরপর কনস্টেবল সাফিউর তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কথা বলে যোগাযোগ শুরু করেন।

রমজানের ঈদের পর এক রাতে থানার ব্যারাকে একা থাকাকালে সাফিউর তার কক্ষে ঢুকে জাপটে ধরে ধর্ষণ করেন এবং মুখ চেপে ধরে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। এরপর থেকে সেই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে নিয়মিত তাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন।

নারী কনস্টেবল দাবি করেন, গত ১৫ আগস্ট রাত ২টা ৩০ মিনিটে সাফিউর আবারও তাকে ধর্ষণ করেন। রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

তিনি অভিযোগ করেন, সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করলে বা বিয়ের কথা তুললে সাফিউর তাকে মারধর করতেন। নির্যাতনের একাধিক ছবিও তার কাছে রয়েছে।

থানায় মামলা নিতে গড়িমসি

ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, ১৬ আগস্ট তিনি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইবনে ফরহাদকে বিষয়টি জানান। তিনি ওসি তদন্ত আল-আমিন হোসেনকে অবহিত করেন। তবে যেহেতু অভিযুক্ত সাফিউরের বাড়ি ওসি তদন্তের একই এলাকায়, তাই শুরু থেকেই তাকে রক্ষার চেষ্টা করা হয়।

১৭ আগস্ট থানায় গিয়ে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে চাইলে ওসি আক্তার হোসেন তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, ওসি তাকে বলেন—“আমরা চাকরি করি, কেউ অভিযোগ করলেই তো মামলা নিতে পারি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বললে তারপর ব্যবস্থা নেব।”

ওসি তাকে আলামত নষ্ট না করার বিষয়ে সতর্ক করলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং থানার মুন্সীর মাধ্যমে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অভিযোগ না করার জন্য চাপ দেন।

পুলিশের ব্যাখ্যা

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এটি প্রেমঘটিত বিষয় নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হচ্ছে—সবকিছু তদন্তে বের হবে। নারী কনস্টেবল অভিযোগ করার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আইন বিশেষজ্ঞদের মত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই বাহিনীর সদস্য হলেও ভুক্তভোগী নারী কনস্টেবলের অভিযোগটি ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে। তাই বিভাগীয় শাস্তির পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা অপরিহার্য। অন্যথায় এটি পুলিশের ভেতরে ভুক্তভোগী সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

উপরে