প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৫ ১০:০২

পাটের সোনালী দিন শেষের পথে!

মশিউর রহমান, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধাঃ :
পাটের সোনালী দিন শেষের পথে!
বাংলাদেশের গর্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস “সোনালী আঁশ” পাট আজ বিলুপ্তির পথে। দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত এ আঁশের জৌলুস এখন অতীত। উৎপাদন ও ফলন কমছে, বাড়ছে উৎপাদন খরচ। বাজারে ন্যায্যমূল্য না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা।
 
কৃষকদের হিসাবে, বর্তমানে এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু উৎপাদিত পাট বিক্রি করে সেই খরচই ওঠানো যাচ্ছে না। বাজারে চাহিদা না থাকা ও দাম কম হওয়ায় কৃষকদের প্রতি বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে।
 
ধাপেরহাট হিংগার পাড়া গ্রামের কৃষক রোস্তম খাঁন ও ছাইগাড়ী গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, “এক বিঘা জমিতে পাট চাষে যে খরচ হয়, বাজারে বিক্রি করে তা ওঠানোই কষ্টকর। লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাই ফেরত পাই না।”
 
আবহাওয়া পরিবর্তন, মানসম্মত বীজের অভাব, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া এবং সঠিকভাবে রেটিং (পাট পঁচানো) করতে না পারার কারণে ফলন আগের তুলনায় কমেছে। অন্যদিকে শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি কৃষকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
 
কামারপাড়ার কৃষক বিষু দাস জানান, দেশে পাটের দাম নেই। সিনথেটিক ও প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক বাজারেও পাটের কদর অনেক কমে গেছে। ফলে কৃষকেরা ধীরে ধীরে অন্য ফসলে ঝুঁকছেন। অনেক এলাকায় এখন আর পাট চাষ দেখা যায় না, যেখানে একসময় আঁশ শুকানোর দৃশ্য ছিলো গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ।
 
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয় কার্যক্রম জোরদার করা দরকার। পাশাপাশি মানসম্মত বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাজারে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করলেই কেবল পাট আবার ফিরে পাবে আগের জৌলুস।
 
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার অপূর্ব ভট্টাচার্য জানান, এ বছর উপজেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, “পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্য। কৃষককে টেকসইভাবে পাট চাষে ফিরিয়ে আনতে হলে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের পাশাপাশি আধুনিক গবেষণা সম্প্রসারণ করে কৃষক পর্যায়ে বাস্তবায়ন করলে উৎপাদন বাড়বে।”
উপরে