প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:০৯
জয়পুরহাটে অধ্যাপক সেলিমকে মারপিটের প্রতিবাদে মুসল্লীদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন
জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা-
জয়পুরহাটের কালাইয়ে সহকারী অধ্যাপককে মারধর করার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের পর কালাই আহলে হাদীস মসজিদের মুসল্লীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে।
এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও কালাই টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুল ইসলাম ফিতা’ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আলিম সরকার, উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও কালাই ডিগ্রি কলেজের সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন আহম্মেদ, আহলে হাদীস মসজিদের আজকের জুমার নামাজের ইমাম গোলাম মোস্তফা, মাওলানা মোজাফ্ফর হোসেনসহ প্রমুখ।
এ সময় তারা প্রতিবাদকারীরা দাবি করে বলেন, অপরাধীদের শুধু জেল দিলেই হবে না, মার্কেট থেকে তাদের দোকানঘরের বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। তারা বলেন, বিষয়টি মার্কেটের সাধারন সম্পাদককে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এর আগে বৃহস্পতিবার
হাতিয়র কামিল মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর কামিল বিভাগে ভর্তির জমাকৃত কাগজপত্র ফেরত চাওয়া নিয়ে ওই মাদ্রাসার আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপককে মাওলানা সেলিম রেজাকে ওই দিন বিকেল পৌনে ৬টার দিকে কালাই আহলে হাদীদ মসজিদ মার্কেটে বেধরক মারপিট করেছে ওই শিক্ষার্থীর স্বামী ও দেবর। পরে আহত সহকারি অধ্যাপককে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
তখন মারপিটের ঘটনা বাহিরে জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা ওই শিক্ষার্থীর স্বামী, দেবর ও শশুরকে ওই মার্কেটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবরুদ্ধ করে রাখেন। মার্কেটের বাহিরে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে লোকজনের উত্তেজনা বিরাজ করলে তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে। এরপর অভিযুক্ত দুই ভাইকে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের ১৫ দিনের কারাদন্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান । দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আব্দুন নুরের দুই ছেলে আব্দুল্লা আল মাহমুদ (৩৮) ও নুর মোহাম্মদ ওরফে নুরনবী (৩৫)।
আহত মাওলানা সেলিম রেজা হাতিয়র কামিল মাদ্রাসার আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও কালাই আহলে হাদীস জামে মসজিদের খতিব। পাশাপাশি এলাকার ২২টি মসজিদের সংযুক্ত কালাই আহলে হাদীস ঈদগাঁ মাঠের খতিবও তিনি। এছাড়া কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেটে তিনি কাপড়ের ব্যবসাও করেন।
মাদ্রাসা, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, আব্দুল্লা আল মাহমুদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার হাতিয়র কামিল মাদ্রাসা থেকে গত ২০২৩ সালে কামিল পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। সে সুবাদে বৃহস্পতিবার সকালে আব্দুল্লা আল মাহমুদ হাতিয়র কামিল মাদ্রাসায় পাশের যাবতীয় কাগজপত্র নিতে যায়। সেখানে সকল কাগজপত্র প্রস্তুত করে দিলেও জমা দেওয়া ফাজিল পাসের কাগজপত্র ফেরত দিতে পারেননি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মাদ্রাসায় আরবি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাওলানা ফারুক হোসেন ও মাওলানা সেলিম রেজার সাথে তর্কে জড়ান মাহমুদ। একপর্যায়ে মাহমুদ সেখান থেকে চলে আসেন। ওই দিন বিকেলে মাওলানা সেলিম রেজা মাদ্রাসা থেকে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেটে আসেন। দোকান খুলে তিনি সামনের একটি দোকানে বসেন। একই মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করেন অভিযুক্ত আব্দুল্লা আল মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসায় তর্কের জের ধরে বিকেলে মাহমুদ, তার ছোট ভাই নুরনবী ও তাদের বাবা আব্দুন নুর মিলে মাওলানা সেলিমকে সেখানে ঘেরাও করে বেধরক মারপিট করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি মার্কেটের গলিতে পড়ে যান। তাদের মারপিটে ভেঙ্গে যায় তার এক হাত। এ অবস্থায় বিষয়টি বাহিরে জানাজানির একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেটের মধ্যে অবস্থান নিয়ে বাবা ও দুই ভাইকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আক্তার জাহান, কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে অভিযুক্ত দুই ভাই আব্দুল্লা আল মাহমুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে নুরনবীকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে দুইজনকেই ১৫ দিনের কারাদন্ডাদেশ দেন।
