শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়ন: রুল জারির সাত মাসেও কোনও কর্মপরিকল্পনা আদালতে জমা নেই
 
                    
                    
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়নে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা জারির সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কর্মপরিকল্পনা আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি-বেলা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের আহ্বান জানায়।
বেলার পক্ষ থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, রংপুর জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগের পরিচালক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-সহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি প্রদান করা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনা ও প্রেক্ষাপট
বেলার আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না বলেন, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রংপুর হাইকোর্ট শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়নের জন্য রুল জারি করেন। ওই রুলে রংপুর জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তিন মাসের মধ্যে নিম্নলিখিত কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়—
খালের মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ
দখলদার উচ্ছেদ
দূষণের উৎস চিহ্নিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ
খাল রক্ষণাবেক্ষণ
খাল পুনঃখনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা
আদালত এ বিষয়ে জানতে চায়, কেন এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না এবং কেন দখল, দূষণ ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
অগ্রগতি না থাকা ও স্থানীয় পরিস্থিতি
রুল জারির সাত মাস পেরিয়ে গেলেও নির্দেশনার কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। চলতি বছরের জুলাইয়ে বেলা প্রতিনিধি শ্যামাসুন্দরী খাল পরিদর্শন করে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কোনও উদ্যোগ লক্ষ্য করেননি। এ প্রেক্ষিতে ২০ জুলাই সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্যামাসুন্দরী খাল রক্ষায় ‘রংপুর সদর উপজেলাধীন শ্যামাসুন্দরী খালের পুনঃখনন, দূষণরোধ ও বনায়ন কাজ’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, “বেলার করা রিটের জবাব প্রোপার চ্যানেল অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। ১৪ আগস্ট শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং চলতি মাসের ৯ তারিখে টেন্ডার হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই কাজ শুরু হবে।”
শ্যামাসুন্দরী খালের করুণ চিত্র
শ্যামাসুন্দরী খাল রংপুর নগরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রায় ১৩৪ বছর পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী জলপ্রবাহ। ১৮৯০ সালে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকি বল্লভ সেন তার মা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণে খাল পুনঃখনন করেছিলেন। খালটির দৈর্ঘ্য সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে প্রায় ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৩ থেকে ৯০ ফুট পর্যন্ত।
খালটি উত্তর-পশ্চিমে কেল্লাবন্দ ঘাঘট নদী থেকে শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করে খোকসা ঘাঘট নদীতে মিশেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খালটি মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে। দুইপাড়ে দোকান, ঘরবাড়ি, অবৈধ স্থাপনা ও আবর্জনা ফেলার কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই অবস্থা নগরবাসীর জন্য জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উৎপাতের সৃষ্টি করেছে। খালে গৃহস্থালি বর্জ্য, পলিথিন ও পয়ঃবর্জ্য ফেলা হচ্ছে, ফলে পানির দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মাছসহ জলজ প্রাণীর জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
দুর্যোগের প্রেক্ষিতে আহ্বান
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি-বেলা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানায়, দ্রুত আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে শ্যামাসুন্দরী খালের পুনঃখনন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে।

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
 
                         
                          
                         
                          
                         
                          
                         
                          
                         
                          
                         
                          
                