জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে উপদেষ্টাদের দায়মুক্তি সম্ভব নয়। জনগণের পক্ষে গণঅভ্যুত্থানে প্রাপ্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলেই কেবল উপদেষ্টারা সেফ এক্সিট পেতে পারেন।

শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর নগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের দীর্ঘ সময়ের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, তারা কেবল ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যেতে চান। কিন্তু জনগণ যে দায়িত্ব তাদের দিয়েছে, সেটি পালনে কোনো ধরনের ফাঁকিবাজি বা পলায়নপর মানসিকতা গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সেফ এক্সিটের নামে দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। উপদেষ্টাদের অবশ্যই জনগণের প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে গণআন্দোলনের অর্জন বাস্তবায়ন করতে হবে।”

জোট প্রসঙ্গে এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এনসিপি নিবন্ধনের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এখনও কোনো দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে জাতীয় স্বার্থ ও দেশের মানুষের কল্যাণে প্রয়োজন দেখা দিলে আদর্শিক ভিত্তিতে যে কোনো জোটে অংশ নিতে আমরা প্রস্তুত।”

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে সরকার আশ্বস্ত করেছে। ভবিষ্যতে গণভোটের মাধ্যমে সংসদকে এ বিষয়ে ক্ষমতা প্রদান করে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। জুলাই সনদের অর্জন ধরে রাখতে এনসিপি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “সরকার যেন জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো একপেশে আচরণ না করে। সনদের বাস্তবায়নে জনগণের প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়ে সত্যিকারের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

নির্বাচন প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা না হয় এবং বিচার সংস্কার দৃশ্যমান না হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উৎসব অর্জন সম্ভব হবে না। সরকারের প্রস্তুতি যেন ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য পূরণে খুন, গুম ও আয়নাঘরের বন্দিত্বে যারা জড়িত ছিলেন—সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই ও র‌্যাবের কিছু সিনিয়র কর্মকর্তা—তাদের অনেকেরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। যারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জেলা আহ্বায়ক আসাদুল্লাহ গালিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর নয়ন, আলাল উদ্দিন কাদেরী শান্তিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।

এর আগে, আখতার হোসেন নগরীর ছোট নুরপুর কবরস্থানে সদ্য প্রয়াত রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর কবর জিয়ারত করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিকেলে তিনি পীরগাছা উপজেলার নব্দীগঞ্জ বাজারে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।