প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ০০:২৭

চবি এ.এফ রহমান হলের ভিপি নির্বাচনে ক্ষেতলালের শাহরিয়ারের ঐতিহাসিক জয়

মো. আমানুল্লাহ আমান, বিশেষ সংবাদদাতাঃ
চবি এ.এফ রহমান হলের ভিপি নির্বাচনে ক্ষেতলালের শাহরিয়ারের ঐতিহাসিক জয়

দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ. এফ. রহমান হলে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা হলো। ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের কৃতিসন্তান মো. শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ। এই জয় শুধু ব্যক্তিগত নয়—জয়পুরহাট তথা উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক অনুপ্রেরণার মুহূর্ত।

 

ছাত্রদলের বাজিমাত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনে এ. এফ. রহমান হলে এক ঐতিহাসিক ফলাফল তৈরি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
এই হলে ভিপি পদে শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ এবং জিএস পদে মো. তামিম চৌধুরী দুজনেই ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন।

ভিপি পদে শাহরিয়ার পেয়েছেন ৩৬৯ ভোট, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল ইসলাম পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট
জিএস পদে তামিম পেয়েছেন ৩৭৯ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী জাবের আহমদ পেয়েছেন মাত্র ৩২ ভোট
এজিএস পদে জয়ী হয়েছেন সাইদুল ইসলাম, পেয়েছেন ২৯৮ ভোট

 

শিক্ষাজীবন ও পারিবারিক পটভূমি

শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের কাজী সানাউল ইসলাম ও আইরিন নাহার দম্পতির বড় ছেলে।
২০০০ সালে জন্ম নেওয়া এই তরুণের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পশ্চিম দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
২০১৭ সালে জয়পুরহাট রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫,
এবং ২০১৯ সালে রাজশাহী গভর্নমেন্ট সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের (২০১৯–২০ সেশন) শিক্ষার্থী।
স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৩৮ পেয়ে পাস করেছেন, বর্তমানে স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থী।

তাঁর বাবা কাজী সানাউল ইসলাম মামুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী,
আর মা আইরিন নাহার শিল্পী ক্ষেতলাল উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক।

 

ভিপি শাহরিয়ারের অনুভূতি

জয়ের পর শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ বলেন—

“এই বিজয় কেবল আমার নয়, এটি ছাত্রদলের আদর্শ, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও শিক্ষার্থীদের বিশ্বাসের জয়। আমি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন,

“চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকে ‘শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট’ বলে। সেখানে ছাত্রদলের পক্ষে জয় পাওয়া সহজ ছিল না। তবুও প্রমাণ হয়েছে—বিশ্বাস, পরিশ্রম ও ঐক্য থাকলে অসম্ভব কিছু নয়।”

নিজের প্রার্থিতা নিয়ে সোহাগ বলেন,

“আসলে রাজনীতি করার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু বড় ভাই ও বন্ধুদের উৎসাহে প্রার্থী হই। তারা বলেছিল—‘তুই কর, তুই পারবি।’ সেই বিশ্বাসই আজ আমার শক্তি।”

 

পরিবারের প্রতিক্রিয়া

বাবা কাজী সানাউল ইসলাম ছেলের এই জয় নিয়ে আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন—

“আমরা সবসময় তাকে বলেছি, বিনয়ী হতে হবে, সবাইকে সম্মান দিতে হবে। সে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী—প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল। আজ তার এই সাফল্য আমাদের পরিশ্রমের ফসল।”

তিনি আরও যোগ করেন—

“এখন সে মাস্টার্সের শেষপর্বে, পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা চাই সে শিক্ষিত, নীতিবান ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

 

জয়পুরহাটের গর্ব, ক্ষেতলালের গৌরব

এই সাফল্যে এখন জয়পুরহাট ও ক্ষেতলাল জুড়ে আনন্দের জোয়ার।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত গর্বিত শাহরিয়ারের এই অর্জনে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর জয় সংক্রান্ত পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, চারপাশে অভিনন্দনের বন্যা।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রাজনীতিতে এই জয় শুধু এক শিক্ষার্থীর বিজয় নয়—
এটি প্রমাণ করেছে, প্রান্তিক এলাকার তরুণরাও তাদের মেধা, সংগঠন ও নেতৃত্বগুণে বড় জায়গায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে।
শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ এখন নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক—
ক্ষেতলালের মাটি থেকে উঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি হওয়া এক তরুণের সাফল্যগাথা।

উপরে