প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:৩৪

নীলফামারীর ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ শিক্ষক মিলে ৪ শিক্ষার্থী পড়ান

নীলফামারী সংবাদদাতাঃ
নীলফামারীর ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ শিক্ষক মিলে ৪ শিক্ষার্থী পড়ান
বিদ্যালয় ভবন। ছবি- সংবাদদাতা

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ৬ জন, কিন্তু নিয়মিত ক্লাসে অংশ নেয় মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থী। ঝকঝকে নতুন ভবন, বিশাল মাঠ, শিক্ষকও পর্যাপ্ত—তবু শিক্ষার্থী না থাকায় বিদ্যালয়টি এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠটি এখন শিক্ষার চেয়ে অন্য কাজে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয়রা মাঠে ঘুটি খেলে ও লাকড়ি শুকানোর জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেন। এলাকাবাসীর অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।”

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তৃতীয় শ্রেণিতে ক্লাস নিচ্ছিলেন, কিন্তু শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র দুইজন। একই অবস্থা চতুর্থ শ্রেণিতেও। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে বা নাম প্রকাশে শিক্ষকরা অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৯ জন। তবে মৌখিকভাবে ৮৯ জনের নাম বলা হয়। বাস্তবে সকাল শিফটে গড়ে ২ থেকে ৬ জন এবং দুপুরের শিফটে ২ থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সব শিক্ষার্থীর নামেই উপবৃত্তি চালু রয়েছে।

বিদ্যালয়ের সময়সূচি অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস হয়, এবং সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন শাহ বলেন,

“বিদ্যালয়ের আশপাশে এনজিও পরিচালিত স্কুল গড়ে উঠেছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এলাকার মহিলারা, ফলে তারা নিজেদের চাকরি বাঁচাতে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেখানে নিয়ে গিয়ে ক্লাস করান। পাশাপাশি পাশেই ‘ইসলামী কিন্ডারগার্টেন’ নামে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। তারা দ্বীনি শিক্ষার নামে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকালবেলা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়। ফলে আমাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়।”

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়াতে অভিভাবক ও মা-সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন,

“ওই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ১৯ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৮ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৫ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৭৯ জন শিক্ষার্থী।”

তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকের পদ অনুমোদিত থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৪ জন।

“শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” — বলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।

এদিকে এলাকার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি ও এনজিওভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিস্তার স্থানীয় শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

উপরে