প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:০৫

৫ লাখ টাকা না দিলে ফাইল ছাড় হবে না”—বগুড়ায় দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র;

বগুড়ার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখা
আল-মামুন, বগুড়াঃ
৫ লাখ টাকা না দিলে ফাইল ছাড় হবে না”—বগুড়ায় দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র;

বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় ঘুষ–দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ উত্তোলনের নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী জমির মালিক ফাতেমা বিবির স্বামী ফুল মাহমুদ।

‎গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী জমির মালিকের পক্ষে তার স্বামী ফুল মাহমুদ।


‎সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে তিনি জানান, তার স্ত্রী ফাতেমা বিবি-র নামে নিবন্ধিত ও দখলীয় জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়। উক্ত জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় এলএ শাখার সার্ভেয়ার ফিরোজ আহমেদ প্রথমে মাঠপর্যায়ে তদন্তে গিয়ে ফাতেমা বিবির মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করেন। পরে ফুল মাহমুদকে অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

‎ফুল মাহমুদ আরো জানান, "৫২২ নং প্রসেস এর একটি নোটিশ যার মিস কেস নং ৩৫৫/২০২১, এল এ কেস নং ০৬/সাসেক/২০১৯ এর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কানুনগো ফজলুর রহমান ও সার্ভেয়ার আব্দুল খালেক এবং সার্ভেয়ার শফিকুল ইসলাম কে বলা হলেও, নোটিশে নাম না থাকা সত্ত্বেও সরেজমিনে সার্ভেয়ার ফিরোজ তদন্ত করতে আসেন। এবং পরবর্তীতে এই ফিরোজ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখায় উপস্থিত হতে বলেন, আমি  সেখানে গেলে তিনি সয়ং আমার নিকট উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ ঘুষ দাবি করেন।
‎আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফিরোজ আহমেদ নানা অজুহাত তৈরি করে আমাদের জমিতে নতুন করে অংশীদার জাহির করতে শুরু করেন।"

‎তিনি আক্ষেপের সহিত বলেন, "সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা জমির মালিক এই সত্য প্রমাণ হওয়ার পরও প্রশাসনিকভাবে দুর্নীতিবাজ মহল প্রভাব খাটাচ্ছে।"

‎ফুল মাহমুদ ও ফাতেমা বিবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কাছে স্বচ্ছ তদন্ত ও প্রকৃত মালিকের নিকট ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।
‎তারা বলেন, "আমরা আশা করি জেলা প্রশাসক অফিসের সৎ কর্মকর্তারা এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, নয়তো সাধারণ মানুষ সরকারের উন্নয়নকে অভিশাপ মনে করবে।"

‎পরবর্তীতে ফুল মাহমুদ এই প্রতিবেদককে জানান, আমি এই কর্মকর্তাদের কাজে প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

‎উক্ত সংবাদ সম্মেলনে পর  দৈনিক চাঁদনী বাজারের প্রতিবেদক বাস্তব চিত্র অনুসন্ধানে গেলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। অনুসন্ধানে জানা যায় এলএ শাখার সার্ভেয়ার খালেক উক্ত শাখায় গড়ে তুলেছেন এক প্রাতিষ্ঠানিক দালাল চক্র। সার্ভেয়ার খালেক দালাল আমিনুল সহ একাধিক দালালের মাধ্যমে এল এ শাখার বিভিন্ন মামলায় ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। আর এই দালাল চক্রের হাত দিয়ে ভুক্তভোগী জমি মালিক গণের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমানাদি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। 

‎তদন্তে উঠে এসেছে শিবগঞ্জ উপজেলার এক জমি মালিকের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার বিপরীতে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি এবং পরবর্তীতে দালাল আমিনুলের মাধ্যমে সেই টাকা আদায় করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে।
‎এমনকি শেরপুর উপজেলার একটি অধিগ্রহণ ফাইলে দুই পক্ষের চলমান মামলা থাকা সত্ত্বেও সার্ভেয়ার খালেক উক্ত ফাইল পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য এক পক্ষের নিকট নগদ চার লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এই টাকা ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ও দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দুই বারে নিজেই গ্রহণ করেন খালেক।

‎স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলএ শাখার এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ‘উৎকোচ বাণিজ্যে’ চালিয়ে যাচ্ছেন।
‎তারা জমির মালিকদের ভয় দেখিয়ে, কাগজপত্র জটিল করে এবং "অংশীদার দেখানোর ফাঁদে" ফেলে ঘুষ আদায় করে থাকে।

‎এল এ শাখার দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার ও দালালদের  ঘুষ বাণিজ্যের বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক চাঁদনী বাজারের ২য় পর্বে।

উপরে