সলঙ্গা হাটের খাসজমিতে প্রভাবশালীদের দখল: ৪০ বছর ধরে চলছে কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা
সিরাজগঞ্জের ঐতিহাসিক সলঙ্গা হাট আজ দখলবাজদের কবলে। প্রায় ৪০ বছর ধরে সরকারি খাসজমি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি ও হাটের পেরিফেরি এলাকা প্রভাবশালী একটি চক্র দখল করে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করেছে। এসব ভবন থেকে তারা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করলেও সরকারের কোষাগারে এক টাকাও রাজস্ব জমা পড়ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাটের গরুহাট, ধানহাট ও নদীর পূর্ব পাড়জুড়ে সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থাপনা। অনুসন্ধানে ২১৪ জন অবৈধ দখলদারের নাম পাওয়া গেছে। তাদের অনেকেই রাজনৈতিক প্রভাবশালী। এদের মধ্যে রয়েছেন সলঙ্গা থানা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি জেহাদ, থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মৃদুল কুমার কুন্ডসহ আরও অনেকে।
এদের একজন কালীপদ কুন্ড নিজেকে ভূমিহীন পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে হাটের পেরিফেরির ৩০ শতক ফসলি জমি কবুলিয়ত করে নেন। পরে সেই জমির ৮ শতক প্রায় ৮ কোটি টাকায় বিক্রি করেন আব্দুল মতিন সরকার নামে এক ব্যক্তির কাছে। সেখানে বর্তমানে বহুতল ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চলছে।
সলঙ্গা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী রাঙ্গা বলেন, “সরকারি খাসজমিতে স্থাপনা নির্মাণ বা বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। তবুও প্রভাবশালীরা ভুয়া দলিল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি হাটের ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণেই এই দখলদাররা বছরের পর বছর সরকারি সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। এতে ঐতিহাসিক সলঙ্গা হাট আজ অস্তিত্ব সংকটে।
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা বলেন, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, এখন দেখার বিষয়— প্রশাসনের আশ্বাস কতটা বাস্তবে রূপ নেয় এবং চার দশকের এই দখলদারির অবসান ঘটিয়ে সলঙ্গা হাট কি তার পুরনো গৌরব ফিরে পায়।
