প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:১৮

২৫ পদের জায়গায় চিকিৎসক মাত্র ১০, জনবল সংকট শেরপুরে হাসপাতাল

এনামুল হক, শেরপুর, বগুড়া থেকে
২৫ পদের জায়গায় চিকিৎসক মাত্র ১০, জনবল সংকট শেরপুরে হাসপাতাল

 বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।এ যেন রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালের গেট পেরোলেই চোখে পড়ে মানুষের ঢল। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী রোগীর দীর্ঘ সারি। কিন্তু এই ভরসার স্থাপনাটিই এখন চরম সংকটের মুখে। রোগী বাড়ছে, কিন্তু চিকিৎসক বাড়ছে না বরং কমতেই রয়েছে।

শুধু শেরপুর উপজেলা নয়, আশপাশের ধুনট, নন্দিগ্রাম, শাহজাহানপুর এবং সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও তারাশ থেকেও রোগীরা ভরসা নিয়ে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকা–বগুড়া মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চাপ। সব মিলিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালটিতে রোগীর ঢল নামছে, কিন্তু চিকিৎসক কমে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্সদের।

 

২০১৮ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার অনুমোদন এলেও বাস্তব সুবিধা এখনো আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে। ২০২৫ সালের শুরুতে অতিরিক্ত জনবলের অনুমোদন এলেও চিকিৎসক সংকট দূর হয়নি। ফলে কাগজে যেভাবে শয্যা বাড়ানো হয়েছে, বাস্তবে সেই সম্প্রসারিত কাঠামো চালু করার কোনো সুযোগই তৈরি হয়নি।

 

হাসপাতালের মাসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তঃবিভাগে গড়ে চিকিৎসা নেন ১ হাজার ৪২০ জন রোগী, বহির্বিভাগে ২৬ হাজার ১৪৩ জন এবং জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ২৪০ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৬ জন, মিডওয়াইফ ৪ জন, রেডিওলজিস্ট ১ জন, ল্যাব টেকনোলজিস্ট ২ জন ও ফার্মাসিস্ট ২ জন থাকলেও চিকিৎসকের সংকট পুরো ব্যবস্থাকে ধীর করে দিচ্ছে। তবে উপ- সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ( স্যাকমো) এর কোন সংকট নেই বলে জানা যায়।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, রোগীর ভিড়ে ওয়ার্ডে জায়গা নেই, মেঝে পর্যন্ত ভর্তি। বারান্দাতেও চলছে চিকিৎসা। তবু রোগীরা বলছেন, হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন, আলোর ব্যবস্থা ভালো, ফ্যান-ডাস্টবিন—সবই আছে।

 

রোগী আমিনুল ইসলাম বলেন, “চিকিৎসক কম, কিন্তু যারা আছেন তারা সত্যিই আন্তরিক।”
উপজেলার হাসপাতাল রোড এলাকার আব্দুল হালিম বলেন, “একটু অপেক্ষা করতে হয়, কিন্তু সেবা ভালো।”


গর্ভবতী রোগী রোকেয়ার ভাষায়, “নারীদের জন্য ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে, তবে ডাক্তার বাড়ানো খুব দরকার।”

 

হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন জরুরি বিভাগে ১৫০–২০০ রোগী আসেন। জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া, শিশু নিউমোনিয়া, গর্ভবতী নারীর পরীক্ষা, দুর্ঘটনার আঘাত, সবকিছু সামলাতে দিনরাত এক করতে হয়।
এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, “রোগীর চাপ এত বেশি যে অতিরিক্ত সময় কাজ করা এখন নিয়ম হয়ে গেছে।চেষ্টা করি যেন কেউ চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে না যায়।”

 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী (লিংকন) বলেন,
“চিকিৎসক সংকটের কারণে চাপ বাড়ছে, কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

উপরে