শীতের আগমনী বার্তা: তাড়াশে লেপ-তোশক তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা তুঙ্গে
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় শীতের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই লেপ-তোশক তৈরির কারিগরদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের দোকানগুলোতে এখন দিনরাত চলছে লেপ-তোশক তৈরির ধুম। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় করছেন দোকানগুলোতে, আর কারিগররা যেন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে তাড়াশ পৌর সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায় এক কর্মমুখর পরিবেশ। কারিগররা নিপুণ হাতে তুলা প্রক্রিয়াজাত করছেন। বিশেষ এক ধরনের ধনুক আকৃতির লাঠি (ধনুট) দিয়ে তুলায় আঘাত করে সেগুলোকে মসৃণ ও ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। এরপর সেই প্রক্রিয়াজাত তুলা কাপড়ের কভারে ভরে সুই-সুতার ফোঁড়ে তৈরি হচ্ছে উষ্ণতার পরশ দেওয়া লেপ ও আরামদায়ক তোষক। খস খস শব্দে সুইয়ের প্রতিটি গাঁথুনিতে বাঁধা পড়ছে শীত নিবারণের প্রস্তুতি।
এখানকার একজন অভিজ্ঞ দোকানি, মজিদ মিয়া জানান, প্রতি বছর শীতের শুরুতে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে এবং শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে এই ভিড় আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, "সারা বছর ব্যবসা খুব একটা ভালো যায় না, তাই শীতের এই কয়েক মাসই আমাদের মূল ভরসা। যদিও সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে, তারপরও পূর্বপুরুষদের এই ব্যবসা ধরে রেখেছি। আশা করছি, সময় গড়ানোর সাথে সাথে বেচাকেনা আরও বাড়বে।" তার দোকানে কর্মরত দুজন শ্রমিকের রিজিকের সংস্থানও এই ব্যবসা থেকেই হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই মৌসুমে তাদের এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয় যে, অনেক সময় ঠিকমতো খাওয়ারও সুযোগ মেলে না।
তবে বাজারের পরিস্থিতি আগের মতো নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ম্যাট্রেস, কমফোর্টার এবং কম্বলের মতো রেডিমেড পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে ঐতিহ্যবাহী লেপ-তোশকের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। এ কারণে এখন সামান্য লাভেই ক্রেতাদের কাজ করে দিতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, একটি লেপ বা তোষক তৈরির খরচ নির্ভর করে তুলা, কাপড় এবং আকারের ওপর। বর্তমানে একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরি করতে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা খরচ হয়। একটি সেমি-ডাবল লেপের জন্য ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং একটি ডাবল লেপের জন্য ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। এই খরচের মধ্যেই কারিগরের মজুরি, কাপড় এবং সুতার দাম অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, তোষক তৈরির খরচ কিছুটা বেশি। তুলার মান ও পরিমাণ, নারিকেলের ছোবড়া এবং কাপড়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি তোষকের দাম নির্ধারণ করা হয়।
শীত মৌসুম ছাড়াও বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে লেপ-তোশকের চাহিদা থাকলেও, মূলত শীতকে কেন্দ্র করেই এই শিল্পের মূল চাকা ঘোরে। সব মিলিয়ে, শীতের আগমনকে ঘিরে তাড়াশের লেপ-তোশকের কারিগর ও ব্যবসায়ীরা এক ব্যস্ত সময় পার করছেন।
