প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫২

নারীর অধিকার সুরক্ষায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন শক্তিশালী করা জরুরি: আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ওয়েবিনারে বক্তারা

খবর বিজ্ঞপ্তিঃ
নারীর অধিকার সুরক্ষায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন শক্তিশালী করা জরুরি: আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ওয়েবিনারে বক্তারা

ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২৫: নারী অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুবিধা এবং ন্যায়বিচারের মতো মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অপরিহার্য। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করলেও বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা এই লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

আজ আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “নারী অধিকার সুরক্ষায় শক্তিশালী নিবন্ধন আইন” শীর্ষক ওয়েবিনারে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন বক্তারা। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, জন্ম নিবন্ধনের অভাবে মেয়েদের বয়স প্রমাণ করা কঠিন হয়, ফলে তারা বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে পড়ে। বাল্যবিবাহ নারীর উপর শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, নিবন্ধনহীনতা নারী পাচার এবং ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে সম্পত্তিহীন নারীদের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন হার খুবই কম। দেশে বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের হার মাত্র ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক কম।

বক্তারা বলেন, নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আইন সংশোধন করে পরিবারের বদলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের দায়িত্ব দেওয়া জরুরি। হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করলে প্রত্যেক নারী স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.৯ অর্জন ত্বরান্বিত হবে।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, “জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নারীদের অদৃশ্য করে। প্রতিটি নারীর পরিচয় ও অধিকার নিশ্চিত করতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করা অত্যাবশ্যক।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, “ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় সকল নারীর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।”

জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “হাসপাতালভিত্তিক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে প্রত্যেক নারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।”

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর স্টাফ রিপোর্টার রাবেয়া বেবী। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা ও উপস্থাপনা করেন সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।

উপরে