অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকার থেকে ৮৩২ ভরি সোনা: শেখ হাসিনার হলফনামায় কি উল্লেখ ছিল?
দুদক জানিয়েছে, অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় থাকা দুটি লকার থেকে মোট ৮৩২ ভরি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। লকার দুটি যথাক্রমে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ—এবং অন্যটি শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার নামে ভাড়াকৃত ছিল।
দুটি লকারে কত সোনা ছিল
আজ বুধবার দুদক জানায়—
শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদের লকারে: ৪২২ ভরির বেশি সোনা
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার লকারে: ৪১০ ভরি সোনা
এ ছাড়া পূবালী ব্যাংকে শেখ হাসিনার নামে থাকা আরেকটি লকারে একটি ছোট খালি চটের ব্যাগ পাওয়া গেছে।
দুদক বলছে, লকারে থাকা চিরকুট, বর্ণনা ও প্যাকেটের তথ্য অনুযায়ী স্বর্ণালংকারগুলো—শেখ হাসিনা, তাঁর সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ, এবং শেখ রেহানা ও তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট মালিকানা যাচাই করে আইনগত দায় নির্ধারণ করা হবে।
হলফনামায় সোনার পরিমাণ উল্লেখ ছিল কি?
২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ–৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার সময় শেখ হাসিনা যে হলফনামা জমা দেন, তা এখনো নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে রয়েছে।
হলফনামায় দেখা যায়—
তিনি স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দেখিয়েছিলেন।
সোনা ও মূল্যবান ধাতুর মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
সোনার পরিমাণ বা ভরি—কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
তুলনামূলক তথ্য হলো—
২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি একই পরিমাণ অর্থ—১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা—সোনা ও মূল্যবান ধাতুর মূল্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১৬ বছরে—সোনার ঘোষিত মূল্য অপরিবর্তিত থেকেছে, যদিও এ সময়ে সোনার বাজারদর কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আয়কর বিবরণীতেও মূল্য উল্লেখ আছে, কিন্তু সোনার পরিমাণ নেই, যদিও ফরমে ‘পরিমাণ + মূল্য’—দুটি উল্লেখ বাধ্যতামূলক।
৮৩২ ভরির বর্তমান বাজারমূল্য কত?
২২ ক্যারেট সোনার বর্তমান ভরিপ্রতি দাম ২ লাখ ৮ হাজার টাকা।
সেই হিসাবে ৮৩২ ভরির বাজারদর দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে সোনার দাম দীর্ঘসময় স্থিত ছিল, পরে হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। বাজুসের হিসাব অনুযায়ী—
১৯৭২ সালে এক ভরি সোনা ছিল ১৬০ টাকা
১৯৭৭ সালে ১,৫০০ টাকা
১৯৯০ সালে ৬,২০০ টাকা
২০০০ সালে কমে ৫,৭৫০ টাকা
পরে ধাপে ধাপে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।
লকারে অন্যের সম্পদ রাখা যায় কি?
মূলত লকারগ্রহীতার ওপরই নির্ভর করে লকারে কী থাকবে।
একটি বড় ব্যাংকের লকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন—
লকারে গ্রাহক কী রাখছেন, তা ব্যাংক দেখতে পারে না।
দুটি চাবি লাগে—একটি ব্যাংকের, অন্যটি গ্রাহকের।
ব্যাংক কেবল লকার খুলে দিয়ে চলে যায়।
লগবুকে শুধু সময়–তথ্য নথিভুক্ত হয়।
এনবিআর কর্মকর্তা জানিয়েছেন—
আয়কর দপ্তর ধরে নেয়, লকারে যা আছে—সেটা লকারগ্রহীতারই।
যদি গ্রাহক দাবি করেন অন্যের সম্পদ রেখেছেন, তাহলে তার প্রমাণ দিতে হয়।
যে ব্যক্তির সম্পদ বলা হচ্ছে, তার আয়কর বিবরণীতে তা আছে কি না, সেটাও যাচাই করা হয়।
অর্থাৎ লকারে রাখা সম্পদের মালিকানা যে কেউ বললেই হবে না—আইনগত প্রমাণ লাগবে।
এখন আইনি প্রক্রিয়া কী?
এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী—
উদ্ধারকৃত সোনার তথ্য আয়কর বিবরণীতে না থাকলে
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বা তাঁর আইনি প্রতিনিধিকে শুনানিতে ডাকা হবে।
তবে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।
১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
সেই মামলায়ও তিনি ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগ দেননি।
অন্যদিকে তাঁর সমর্থকেরা দাবি করছেন—লকারের সোনার ঘটনা ‘সরকারের সাজানো গল্প’।
তারা বলছেন—এগুলো শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পদ নয়।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আজ জানিয়েছেন—
লকারে পাওয়া সোনা বৈধ না অবৈধ—তা যাচাই চলছে।
