পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিত ৮০ হাজার ৪৬২ জন দর্শক। সবার মধ্যেই পিনপতন নিরবতা। ম্যাচ দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। বেন স্টোকস এবং মইন আলী উইকেটে। বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। এ সময় বোলিং করতে আসলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
কিন্তু ১৬তম ওভারের প্রথম বল করার পরই মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো তাকে। পায়ের পুরনো ইনজুরিটা নতুন করে জেগে উঠেছে এর একটু আগেই হ্যারি ব্রুকসের ক্যাচ ধরতে গিয়ে। আফ্রিদির অসমাপ্ত ওভারটা করতে এলেন ইফতিখার আহমেদ।
তার ওই ওভারেই আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার কাজটি করে নিলেন বেন স্টোকস। ১৩ রান নিলেন ইফতিখারের কাছ থেকে। বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনার মূল কাজটি করে নিলেন স্টোকস।
পরের ওভারেই মোহাম্মদ ওয়াসিমের কাছ থেকে ১৬ রান নিলেন মইন আলি এবং স্টোকস। বল আর রানের ব্যবধান কমে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৮ বলে ১২ রান। পরের কাজ সারতে আর বেগ পেতে হলো না ইংলিশদের।
শেষ পর্যন্ত ১ ওভার হাতে রেখেই ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিলেন স্টোকস। ৫ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট পরে নিলো ইংল্যান্ড।
বেন স্টোকস কত বড় মাপের ক্রিকেটার আরও একটি বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি প্রমাণ করে দিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা সবার নিশ্চয় মনে আছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচটিকে শেষ পর্যন্ত একা টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর সুপার ওভার কিংবা বাউন্ডারির হিসেব যাই হোক, ম্যাচকে সে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মূল নায়ক ছিলেন তিনি।
এবারও সেই বেন স্টোকস। অ্যালেক্স হেলস, পিল সল্ট, জস বাটলার কিংবা হ্যারি ব্রুকসদের আউট হয়ে যাওয়ার পর লো স্কোরিং ম্যাচটাও যখন কঠিন হয়ে উঠছিল, তখন মইন আলিকে নিয়ে উইকেট কামড়ে থাকার নীতিই গ্রহণ করেন তিনি। তার হয়তো চিন্তা ছিল, উইকেট থাকলে শেষ মুহূর্তে রান উঠবেই।
যে ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি মাঠের বাইরে চলে গেলেন এবং ইফতিখার অকেশনাল বোলার হিসেবে বোলিং করতে আসলেন, তার আগে স্টোকসের সংগ্রহ ছিল ৩৫ বলে ২৮ রান। ১৬তম ওভার শেষে স্টোকসের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৩৮ বলে ৩৯। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকলেন ৪৯ বলে ৫১ রানে। যাতে ছক্কা মাত্র ১টি এবং বাউন্ডারি ৫টি।
ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে কখনো মারমুখি হয়ে, কখনো ডিফেন্স করে খেলাকে ধরে রাখা এবং দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে স্টোকসের জুড়ি মেলা ভার। তার এই ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিংই ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করার পর ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট এনে দিলো।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন