বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই সেরা অঘটন? কী বলছে পরিসংখ্যান?
পরিষ্কার ফেবারিট হিসেবে মাঠে নেমেছিলো আর্জেন্টিনা। সবারই প্রত্যাশা ছিল নিশ্চিত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে লিওনেল মেসিরা। শুরুতে একটি গোল দিয়ে সে পথে এগিয়েও যায় তারা।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আচমকা দুটি গোল হজম করে বসে তারা। শেষ পর্যন্ত সেই ২-১ ব্যবধানে হেরেই মাঠ ছাড়তে হয় বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে।
মেসিদের এই হারের পরই আলোচনা শুরু হয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই কী তবে সবচাইতে বড় অঘটন? পরিসংখ্যানই বা কী বলছে? ফুটবলে তো এর আগেও এমন অনেক অঘটনের ঘটনা ঘটেছে। তাহলে সৌদির কাছে আর্জেন্টাইনদের এই হারের অঘটনকে কোথায় স্থান দেওয়া যায়?
পরিসংখ্যানের তথ্য বা ডাটা নিয়ে কাজ করে একটি বিখ্যাত কোম্পানি, নিয়েলসেন গ্রেসনোট। তারা তাৎক্ষণিক তথ্য-পরিংখ্যান ঘেঁটে এবং পর্যালোচনা করে জানাচ্ছে, ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের এই ঘটনাই সবচেয়ে বড় আপসেট বা অঘটন।
ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবে ধরা হতো ১৯৫০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়কে।
নিয়েলসন গ্রেসনোট যে তথ্যগুলোকে এই পর্যালোচনার জন্য আমলে নেয়, তার মধ্যে রয়েছে বর্তমান র্যাংকিং সিস্টেম, দলের শক্তি-সামর্থ্য, স্থান এবং ইতিহাস। এসব বিচার-বিশ্লেষণ করার পরই তারা একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
গ্রেসনোট জানাচ্ছে, ফিফা র্যাংকিংয়ে সৌদি আরব রয়েছে ৫১তম স্থানে। এমন একটি দলের টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত এবং র্যাংকিংয়ে ২ নম্বরে থাকা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল কেবল ৮.৭ শতাংশ। কিন্তু সেটাই শেষ পর্যন্ত ঘটে গেছে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে বড় আপসেটের ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ইতালিকে হারিয়ে দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া, ১৯৯০ সালের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিয়েছিল ক্যামেরুন। অথচ গ্রেসনোটের বড় আপসেটের সেরা ১০টির মধ্যেও নেই এই দুটো।
গ্রেসনোটের সেরা আপসেটের ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১ম: আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের ২-১ গোলে জয়। এই ম্যাচের আগে সৌদি আরবের জয়ের সম্ভাবনা ছিল কেবল ৮.৭ শতাংশ।
২য়: ১৯৫০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ১-০ গোলে জয়। ওই ম্যাচের আগে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ৯.৫ শতাংশ।
৩য়: ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেনের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ডের ১-০ গোলে জয়। ম্যাচের আগে সুইসদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১০.৩ শতাংশ।
৪র্থ: ১৯৮২ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে আলজেরিয়ার ২-১ গোলে জয়। ওই ম্যাচের আগে আলজেরিয়ার জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১৩.২ শতাংশ।
৫ম: ২০০৬ সালে চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে ঘানার ২-০ গোলে জয়। ম্যাচের আগে ঘানার জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১৩.৯ শতাংশ।
৬ষ্ঠ: ১৯৫০ সালের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে উরুগুয়ের ২-১ গোলে জয়। ম্যাচের আগে উরুগুয়ের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১৪.২ শতাংশ।
৭ম: ২০১৮ সালে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচের আগে কোরিয়ানদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১৪.৪ শতাংশ।
৮ম: ১৯৫৮ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল ওয়েলস। ওই ম্যাচের আগে ওয়েলসের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১৬.২ শতাংশ।
৯ম: ১৯৮২ সালে স্পেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড। ম্যাচের আগে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সম্ভাবনা ছিল ১৬.৫ শতাংশ।
১০ম: ২০০২ সালের উদ্বোধনী ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল সেনেগাল। ম্যাচের আগে সেনেগালের জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১৭.৩ শতাংশ।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন