ব্যাটিংয়ে সেই আগের মতো যাচ্ছেতাই অবস্থা!
সাফল্য আসলে তাতে ঢাকা পড়ে যায় অনেক কিছুই। সবাই সাফল্যের কথাই মনে রাখে। সাফল্যের ডামাঢোলে ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে। গেছেও। ২-১ এ সিরিজ জিতলেও বাংলাদেশ যে গত বছর এই সাগরিকাতেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে খুব ভাল ক্রিকেট খেলেনি, একটি মাত্র ম্যাচ ছাড়া পুরো সিরিজে ব্যাটিং ভাল হয়নি। সে কথা মনে আছে কয়জনের?
সবার মনে আছে, বাংলাদেশ যথাক্রমে ৪ উইকেট ও ৮৮ রানে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজের করে নিয়েছিল এবং ‘বাংলাওয়াশের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচে ৭ উইকেটে হারে সে সম্ভাবনা যায় ভেস্তে। আফগানদের ‘বাংলাওয়াশের’ স্বপ্ন- স্বপ্নই থেকে যায়।
কিন্তু ওই সিরিজের স্কোরলাইন খুব ভালভাবে লক্ষ্য করলে আর মনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলেই পরিষ্কার হবে তিন ম্যাচের একটিতেও দল হিসেবে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে ব্যাটাররা একটা ইউনিট হিসেবে খেলতে পারেননি।
ওই সিরিজের অধিনায়ক তামিম ইকবাল (৮, ১১ ও ১২) তিন ম্যাচেই ছিলেন চরমভাবে ফ্লপ। প্রতি খেলায়ই আফগান ফাস্ট বোলার ফজলহক ফারুকির বলেই আউট হয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসানের ব্যাট-বলও অন্য সময়ের মত আলো ছড়াতে পারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৩ বলে ৮৬ রানের কার্যকর ইনিংস খেলা ছাড়া নির্ভরতার প্রতিক মুশফিকুর রহিমও বাকি ২ ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।
ব্যাটারদের ব্যাটে ধারাবাহিকতা কম থাকায় প্রথম ম্যাচে ২১৬ রানের মাঝারি টার্গেট ছুঁতেও অনেক কষ্ট হয় তামিম বাহিনীর। মাত্র ৪৫ রানে তামিম (৮), লিটন (১), সাকিব (১০), মুশফিক (৩), ইয়াসির আলী (০) আর মাহমুদউল্লাহ (৮) সাজঘরে ফেরত গেলে নিশ্চিত হারের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে মেহেদি হাসান মিরাজ আর আফিফ হোসন ধ্রুব সপ্তম উইকেটে অনমনীয় দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে ৪ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় উপহার দেন। খাদের কিনারায় নিশ্চিতপ্রায় হারের মুখে দাঁড়িয়েও সাহসী নাবিকের মত দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন আফিফ (১১৫ বলে ৯৩*) আর মিরাজ (১২০ বলে ৮১*)।
রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, মুজিবুর রহমান, হাসমতউল্লাহ শহীদিদের বাংলাওয়াশ করার ম্যাচে বাজে ব্যাটিং করে উল্টো ৭ উইকেটের পরাজয় হলো সঙ্গী টাইগারদের। লিটন দাস একা লড়লেন। তার ব্যাট থেকে আসলো ৮৬ রানের সংগ্রামী ইনিংস। বাকিরা ব্যর্থতার ঘানি টানলেন। সাকিব ৩০ আর রিয়াদ ২৯ ছাড়া সবাই ব্যর্থ। মাত্র ১৯২ রানে অলআউট হয়ে ৭ উইকেটে হার মানে তামিমের দল।
এবার ১৭ মাস পর আবার ব্যাটিংয়ের করুন অবস্থা। এবার বিচ্ছিন্নভাবেও জ্বলে উঠছে না কারো ব্যাট। প্রথম দিন তাওহিদ হৃদয় পঞ্চাশে (৫১) পৌঁছালেও পরের ম্যাচে সবাই ফ্লপ। আর তাই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ বুঝি আগের চেয়ে এবার খুব বেশি খারাপ খেলছে।
আসলে তা নয়। এক বছর আগেও টিম পারফরমমেন্স ছিল অনুজ্জ্বল। বোলাররা মোটামুটি উৎরে গেলেও ব্যাটারদের অবস্থা ছিল বেশ খারাপ। লিটন দাসই দুই ম্যাচে (১৩৬ ও ৮৬) রান করেছেন। আর মুশফিক (৮৬), আফিফ (৯৩*) ও মিরাজ (৮১*) ছাড়া বাকিদের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। তারাই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে দলকে সাফল্যের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
এবার ঠিক সেই ভূমিকা কেউ নিতে পারেননি। প্রথম দিন তাওহিদ হৃদয় একা খানিক্ষণ লড়াই করে পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছেও এর পর-পরই আউট হয়ে গেছেন। অধিনায়ক লিটন, নাজমুল শান্ত , তামিমের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া নাইশ শেখ, দুই অভিজ্ঞ সাকিব-মুশফিক আর আফিফ-মিরাজ সবাই ব্যর্থতার মিছিলে। আর তাই সিরিজে হেরে এখন উল্টো ‘আফগান ওয়াশ’ এড়ানার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে লিটন দাসের দল।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন