প্রকাশিত : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ২৩:২১

নুসরাতকে পুড়িয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর ‘নির্দেশ ছিল অধ্যক্ষের’

অনলাইন ডেস্ক
নুসরাতকে পুড়িয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর ‘নির্দেশ ছিল অধ্যক্ষের’
অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করে’ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা।গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন সিরাজ। তাকে আদালত থেকে নেওয়ার পর মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান।তিনি বলেন, “অধ্যক্ষ সিরাজ স্বীকার করেছেন, কারাগারে নূরউদ্দিন ও শামীম দেখা করতে গেলে তিনি তাদের নির্দেশ দেন- তারা যেন নুসরাতকে তার মায়ের করা মামলা তুলে নিতে বলে, সে তাতে রাজি না হলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে যেন আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়।ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন নুসরাত। তাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ২৬ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নুসরাতের মা। পরদিন অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।নুসরাত জাহান রাফি নুসরাত জাহান রাফি ওই মামলা প্রত্যাহার না করায় গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকা নুসরাত মারা যান।এ মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ অন্তত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই, যাদের অধিকাংশই ওই মাদ্রাসার ছাত্র।কয়েক দিনের মধ্যে ওই মামলার তদন্ত ভার পিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর এই হত্যাকাণ্ডে মূল সন্দেহভাজন হিসেবে আলোচিত ওই মাদ্রাসার ছাত্র নূর উদ্দিন ও শামীম গ্রেপ্তার হয়।জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই কর্মকর্তারা বলছিলেন, নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার দুই দিন আগে কারাগারে গিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে আসেন নূর উদ্দিন ও শামীম। পরে সঙ্গীদের নিয়ে মাদ্রাসার একটি হোস্টেলে বৈঠক করে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেন।সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাতকে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে ছাদে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মামলা তুলে নিতে বলা হলে নুসরাত তাতে আপত্তি জানান। তখন শামীম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিসহ পাঁচজন নুরসাতকে ফেলে দিয়ে তার হাত-বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।শামীমসহ ঘাতকরা যে বোরকা পরে ওই ঘটনা ঘটিয়েছিল, তার একটি বোরকা এরইমধ্যে খাল থেকে উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের নূর উদ্দিন ছিল অধ্যক্ষ সিরাজের ঘনিষ্ঠজন। নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলায় সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তি দাবির আন্দোলনেও সামনের কাতারে ছিল এই যুবক। অন্যদিকে একই মাদ্রাসার ছাত্র শামীম প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নুসরাতের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।মাদ্রাসায় পড়ার পাশাপাশি স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলমের সহকারী হিসেবে কাজ করত শামীম। সে হিসাবে এলাকায় তার বেশ প্রভাবও ছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।নুসরাত হত্যাকাণ্ডে পেছনে এই দুজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করেছিলেন স্থানীয়রা। অধ্যক্ষ সিরাজও তাদেরকে নুসরাতকে মেরে ফেলার নির্দেশনা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেন।

উপরে