শাহজাদপুরে পুলিশের গুলিতে স্কুলছাত্র নিহত
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের চরবর্নিয়া গ্রামের স্কুলছাত্র ইউনুস আলীকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চরবর্ণিয়া গ্রামের নির্মাণাধিন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর এলাকাবাসি বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ কর্মসূচিতে নিহতর বাবা জয়নাল শেখ,মা রওশনারা খাতুন,বোন তানিয়া খাতুন ও সনিয়া খাতুন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন,শাহানুর ইসলাম,সাদ্দাম হোসেন,শরিফুল ইসলাম,আকমল হোসেন,রবিউল করিম,ফরহাদ হোসেন, ইয়াকুব আলী,সেলিম হোসেন, বাছেদ আলী,জোছন আলী,আব্দুল হালিম, আব্দুল হামিদ,সোবহান আলী,মতিন মোল্লা,জিবলুল হোসেন,নাজিম উদ্দিন,রকিব হোসেন,আনু খাতুন,বুলবুলি খাতুন,রজিনা খাতুন,রওশনারা খাতুন,জিয়াসমিন প্রমূখ। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে সকল আসামীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সবার ফাঁসি কার্যকর করা হলে তবেই স্কুলছাত্র ইউনুষ আলীর আত্মা শান্তি পাবে।
তাই অবিলম্বে এ জনদাবী কার্যকর করা না হলে কঠোর ও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ দিকে এ হত্যার ঘটনায় নিহত ইউনুসের বাবা জয়নাল শেখ বাদী হয়ে সেনা সদস্য পলাশ মোল্লাসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ কওে ও আরো অজ্ঞাত ১৫/২০জনকে আসামী কওে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। অপর দিকে এ হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরা হল, সেনা সদস্য তারাব আলী ওরফে পলাশ মোল্লা,মাসুদ,শুকুর,কাশেম,সায়েম,শাহিন,নিকসন,উজ্জল,মোহাম্মদ আলী ও সোহেল।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের চরবর্নিয়া গ্রামে সেনা সদস্য পলাশ মোল্লা গ্রুপের সাথে আখের শেখ গ্রুপের মধ্যে ঈদেও আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ববিরোধের জের ধরে দফায় দফায় হামলা সংঘর্ষ,বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫টি বাড়ির ১০টি ঘর ভাংচুর করা হয়। এ ছাড়া আখের শেখসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। আহতদের পাবনা,বেড়া ও বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান শুরু করে।
এর এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আখের গ্রুপের জয়নাল শেখের ছেলে ও সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ইউনুস আলী (১৪) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এতে শাহজাদপুর থানার এসআই আফজাল হোসেন ও কনস্টবল মিঠুন( ব্যাচ নং ১৪৬০) নামের দুই পুলিশ আহত হয়।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসি জানান, গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বর্ণিয়া খেয়াঘাট থেকে বাঁশের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষ সেনা সদস্য পলাশ মোল্লা ও তার লোকজন অতর্কিতে তার উপর হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ হামলায় ধারালো অস্ত্রেও আঘাতে আখেরের বাম হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আখের গ্রুপের লোকজন সেনা সদস্য পলাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক বাড়িঘর ভাংচুর,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এতে ব্যার্থ হয়ে পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের উপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় ইউনুস আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে মারা যায়।
তারা আরো দাবী করেন,পুলিশ ওই সেনা সদস্যর পক্ষ নিয়ে সরাসরি নিরিহ উৎসুক জনতার উপর গুলি ছোড়ে। এতে স্কুল ছাত্র ইউনুস গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে আপরদিকে,শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান এলাকাবাসির এ দাবী অস্বীকার করে বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা সেনা সদস্য পলাশ মোল্লা পুলিশের হাত থেকে শর্টগান কেড়ে নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালায়। এতে প্রতিপক্ষ জয়নাল শেখের ছেলে ইউনুস আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। তিনি আরো জানান, আটককৃত সেনা সদস্য পলাশ মোল্লা চরবর্ণিয়া গ্রামের হেলাল মোল্লার ছেলে। তিনি বঙ্গবভন গার্ড রেজিমেন্ট পিজিআর সদস্য (সেনা সদস্য নং ৪৫০৭৭২৪)। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে তিনি পূর্ববিরোধের জের ধরে এ হামলা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ দিকে পুলিশ বুধবার নিহত ইউনুসের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ঘটনার পর থেকে আসামী পক্ষ বাড়িঘর ফেলে অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অপরদিকে এ হত্যার ঘটনায় এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।