বগুড়ায় পুলিশে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগে বগুড়ায় আনোয়ার হোসেন (৩৩) নামে সরকারি হাসপাতালের এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নিবিড় তদন্ত শেষে শুক্রবার সকালে শহরের কলোনী চকফরিদ এলাকায় তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরকাটাখালি গ্রামের মো: আজাদের ছেলে সুজন মাহমুদ (১৯) কে আগামী ৩ জুলাই বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বগুড়ায় কন্সটেবল নিয়োগে নিশ্চিত চাকরি প্রদানের নামে এই প্রতারণার আশ্রয় নেন প্রতারক আনোয়ার। এঘটনায় সুজন মাহমুদের ভগ্নিপতি রাশেদুর রহমান শিফন (৩৮) বাদী হয়ে শুক্রবার দুপুরে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে মামলার বাদী রাশেদুর রহমান অভিযোগ করেছেন, তানভির আহম্মেদ রঞ্জু নামে তার এক ভগ্নিপতির সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১১ জুন সকালে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার কর্মস্থল মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়ে তারা দেখা করেন।
রাশেদ তার শ্যালক সুজন মাহমুদকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের চেষ্টা করছেন জেনে আনোয়ার হোসেন কাজটি করে দিবেন বলে অঙ্গিকার করেন সাথে শুধু পুলিশের চাকরি নয় যেকোন ধরণের চাকরিতেই তিনি সঠিক স্থানে যোগাযোগ করে দিতে পারবেন বলে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এজন্য আনোয়ার সুজনের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। নিয়োগের আগে ২ লাখ এবং চাকরি হওয়ার পর বাকি ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেন ১৪ লাখ টাকায় নিয়োগ দিতে সম্মত হন এবং এজন্য নগদ ১ লাখ টাকা দাবি করেন।
পরবর্তীতে পুলিশ কনস্টেবল পদে তার শ্যালকের নিয়োগ নিশ্চিত করতে মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী তিনি গত ১৩ জুন সকালে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়ে আনোয়ার হোসনকে ১ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। কিন্তু জেলা পুলিশের নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক পোস্টার ও ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি প্রদানের বিভিন্ন লিফলেট রাশেদুর ও সুজন মাহমুদের নজরে আসলে তারা বিভিন্ন খোঁজখবরের মাধ্যমে আনোয়ারের প্রতারণার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আছলাম আলী পিপিএম জানান, জেলার গাবতলী উপজেলার আব্দুল মালেকের ছেলে আনোয়ার হোসেন বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের রেকর্ড কিপার হিসেব কর্মরত।
জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি চৌকস দলের অভিযানে তাকে গ্রেফতারের পর ইতিমধ্যে তার নামে মামলা ঋজু করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৯ জুন এই নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতারণার অভিযোগে ৯২ হাজার টাকা গ্রহণ করার সময় আরেক প্রতারক আহসানুল কবিরকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ তিন দিনের মাথায় আবার একজন প্রতারককে গ্রেফতারের পর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী (সদর সার্কেল) জানান, আগামী ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য সরকার নির্ধারিত ১০০ টাকা ফি ছাড়া আর কোন টাকা খরচ করতে হবে না।
জেলা পুলিশ সুপারের দিক-নির্দেশনায় ইতিমধ্যে পুরো জেলায় সচেতনতামূলক পোস্টারিং করা হয়েছে সাথে বিতরণ করা হয়েছে লিফলেট। সেই সাথে পুরো জেলায় পোষাকে ও সাদা পোষাকে পুলিশের নিবিড় মনিটরিং চালু রয়েছে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে। এদিকে গতবার সদ্য যোগ দিয়েই শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে বিনা টাকায় কন্সটেবল নিয়োগ দিয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে দেয়া বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এই বছরও কনস্টেবল নিয়োগে আগের বছরের ধারাবাহিকতায় ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি প্রদানের অঙ্গিকার করেছেন।
সেই সাথে জেলায় এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে কেউ যদি প্রতারণার আশ্রয় নেয় তাকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবেনা বলে জানান তিনি। সেই সাথে এই নিয়োগ সংক্রান্ত কোন দুর্নীতি হলে তা কোনভাবেই সহ্য করা হবেনা বলে জানান জেলা পুলিশের এই কর্ণধার।