প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০১৯ ১৬:২৪
জায়েদ খানের বিস্ফোরক মন্তব্য

‘এরা নায়িকা নয়, পতিতা; প্রযোজকগুলো প্রতারক’

অনলাইন ডেস্ক
‘এরা নায়িকা নয়, পতিতা; প্রযোজকগুলো প্রতারক’

অনেক দিন ধরেই চলচ্চিত্রের নামে ভুয়া মহরত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সেসব অনুষ্ঠানে যাঁদের নায়ক-নায়িকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরাও পরিচিত কেউ নন। যেহেতু ছবিটি আর তৈরিই হয় না, তাই নামসর্বস্ব নায়ক-নায়িকারাও আর দর্শকের সামনে আসতে পারেন না। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর মগবাজারে কিছু রেকর্ডিং স্টুডিওতে অপেশাদার লোকজন  প্রতারণার জন্য ছবির মহরত করছে। আর এর সঙ্গে এফডিসির কয়েকজন অসাধু লোকও জড়িত বলে জানা গেছে।   

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সম্প্রতি এ ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে এত এত নায়ক-নায়িকা দেখি, অথচ এদের কাউকে চিনি না। দুদির পরপর দেখি অডিও স্টুডিওগুলোতে ছবির মহরত হচ্ছে, দেখে নিজেরই হাসি পায়। কথায় আছে, আগে দর্শনদারি, পরে গুণবিচারি। যেসব নায়ক-নায়িকাকে দেখি, তারা তো নিজের দিকেই তাকিয়ে দেখে না। একটা কেক কাটে, পেছনে ব্যানারে লেখা থাকে মহরত। তিন-চারটা নায়িকা নিয়ে মহরত হয়ে যায়। এসব আসলে এক ধরনের প্রতারণা। নামেমাত্র প্রযোজকগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে মেয়েগুলোকে ব্যবহার করছে মহরতের নামে। আলু-পেঁয়াজের ব্যবসায়ী দুই-তিন লাখ টাকা দিয়ে নায়ক হয়ে যায়। আর এই নায়িকাগুলো তো আসলে পতিতা। একজন ব্যবসায়ীকে ফুঁসলিয়ে চলচ্চিত্রে নেমে নিজেকে নায়িকা হিসেবে পরিচয় দেয়। তাদের ছবি কিন্তু আলোর মুখ দেখে না।’

প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জায়েদ খান বলেন, ‘আমি মনে করি, এইসব ছবির বিরুদ্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এগুলো অপরাধ, যা প্রকাশ্যে করা হচ্ছে। এসব নায়ক-নায়িকার জন্য আমাদের শিল্পীদের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, চলচ্চিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

ভুয়া প্রযোজক, ছবি ও নায়িকা নিয়ে পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘এসব ছবির মূল কারণ নায়িকা। নিজের সামাজিক ও অসামাজিক দাম বাড়াতে নিজেকে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চলচ্চিত্রের বাইরের মানুষগুলো তো আর জানেন না, এরা কোন শ্রেণির নায়িকা। আমি মনে করি, এসব ছবির নামে প্রহসন আমাদের চলচ্চিত্রের ইমেজ নষ্ট করছে। কারণ অনেকেই এসব নায়ক-নায়িকাকে দেখেই চলচ্চিত্রের অবস্থা নির্ণয় করছে।’

মানিক আরো বলেন, ‘আমাদের এফডিসির সব মানুষ ভালো তা নয়, আমাদের মধ্যেই কিছু ঠকবাজ, অসাধু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এই ছবিগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। আমি মনে করি, এই মানুষগুলোকেও চিহ্নিত করা উচিত।’  

‘প্রেমের তাজমহল’ খ্যাত পরিচালক গাজী মাহাবুব বলেন, ‘গণতন্ত্রের যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। এখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। স্বাধীনভাবে যার ইচ্ছা সেই ছবি নির্মাণ করতে পারে। এতে করে যেমন ভালো কিছু হচ্ছে, তেমনি মগবাজারের মহরতের ছবির মতো খারাপ ছবি বা প্রতারণাও হচ্ছে। আমার মনে হয়, এখনই এসব প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।’

চলচ্চিত্রের নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল বলেন, ‘এটা শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র ডিজিটাল হওয়ার পর থেকে। এর আগে যখন ৩৫ মিলিমিটারে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতো, তখন এমনটা হতো না। কারণ তখন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে এফডিসির সরকারি খাতায় নাম লেখাতে হতো। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য জমা দিতে হতো। শুটিংয়ের তারিখ, লোকেশনসহ প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতিতে, শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের নাম জমা দিতে হতো। এখন তো মগবাজারে একটি স্টুডিও দুই হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে মহরত করে ছবির ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছে। যদিও বেশির ভাগ ছবি আলোর মুখ দেখে না, তবে যে দু-একটা ছবি মুক্তি পায়, সেগুলো আমাদের অবস্থান নষ্ট করে। আমি মনে করি, এই বিষয়টি সেন্সর বোর্ডের নজরে আনা প্রয়োজন।’

সেন্সর বোর্ডের সদস্য প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘এই ছবিগুলোর বেশির ভাগই সেন্সর বোর্ড পর্যন্ত আসে না। কোনো সিনেমা হলে মুক্তিও পায় না। স্থানীয়ভাবে ডিশ চ্যানেলে প্রচার করে। আবার অনেকে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে চালিয়ে দেয়। আমি মনে করি, এই বিষয়গুলোও নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমি আবারও মিটিংয়ে কথা বলব।’

উপরে