‘হ্যামলেট’র ১৩তম প্রদর্শনী
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শনিবার (৩০ মার্চ) হ্যামলেট নাটকের ১৩তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত উইলিয়াম শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকটি অনুবাদ করেছন সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন মঞ্চ সারথী আতাউর রহমান এবং প্রযোজনা উপদেষ্টা শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী।
নাট্যকাহিনি-
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বিয়োগান্তক নাটক ‘হ্যামলেট’ রচিত হয় ১৫৯৯ ও ১৬০২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যকালীন। এই নাটকটি শেক্সপিয়রের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নাটক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। নাট্যকাহিনির সূচনা হয় ডেকমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যুঘটনাকে কেন্দ্র করে। যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের পিতা। রাজার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস [যুবরাজ হ্যামলেটের পিতৃব্য] সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং প্রয়াত অগ্রজের স্ত্রী [যুবরাজ হ্যামলেটের জননী] গারট্রুডের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
জনককে হারানোর ব্যথা, জননীর সাথে পিতৃব্যের পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া ইত্যাদি যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনের মর্মমূলে নাড়া দেয়। যুবরাজ শোকে-দুঃখে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এই দূর্বিষহ অন্যায় ঘটনাপ্রবাহ মেনে নিতে পারেন না। পিতার প্রেতাত্মা জীবনের এই দুঃসহ লগ্নে তার সামনে আবির্ভূত হয়ে তাকে জানিয়ে দেয় যে, যদিও প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্পদংশনে নিহত হয়েছেন, আসল সত্য হল, তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনা প্রবাহে আরো কিছু গ্রন্থি যুক্ত হয়।
মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রানি গারট্রুডের ঘরে মাতাপুত্রের কথোপকথন শোনার জন্যে আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভ্রম বশত হত্যা করে। পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া পিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মনোবেদনায় ভেঙে পড়ে এবং পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করে জীবনের যন্ত্রণা মেটায়। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে পড়ে।
রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির দ্বৈতক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় বিষ মাখানো ছিল। সে বিষাক্ত তরবারির আঘাতে লেয়ার্তেস হ্যামলেটের ঊর্ধ্ববাহু রক্তাক্ত করে, হ্যামলেট লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করে। রানি গারট্রুড তৃষ্ণার্ত হয়ে বিষাক্ত পানীয় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, যা হ্যামলেটের পান করার কথা ছিল। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র।
রাজার সব ষড়যন্ত্র যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মৃত্যু পথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে, তখন যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পান করতে বাধ্য করে এবং সে নিজেও প্রাণত্যাগ করে। এভাবে চার চারটি জীবনের অবসান ঘটে তরবারি-ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে। হ্যামলেটের সার্বক্ষণিক অনুগামী প্রিয় বন্ধু হোরেশিও থেকে যায় পরবর্তী প্রজন্মকে এই বেদনা বিধুর কাহিনি শোনাবার জন্যে।
উল্লেখ্য, হ্যামলেট নাটকের গত কয়েকটি প্রদর্শনীতে মিলনায়তন দর্শকপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বর্তমান সময়ে নাট্যঙ্গনের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। আগ্রহী দর্শকদের জন্য অনলাইনে টিকিট বুকিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একাডেমির ফেইজবুক পেইজ থেকে নাটকের টিকিট বুকিং করা যাবে।